আন্তর্জাতিক বাজার নিম্নমুখী হলেও কেন ভারতে বাড়ছে পেট্রল-ডিজেলের দাম?
নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির দায় কার? কেন্দ্রের সাফাই, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের। তাদের দাবি, যুদ্ধের জন্যই অশোধিত তেলের দাম বেড়েছে। দেশীয় বাজারে তার প্রভাব পড়েছে পেট্রপণ্যে। ফল? জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি। কিন্তু হালে আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম নিম্নমুখী হওয়ার পরও কেন আম আদমির সুরাহা হয়নি? নিরুত্তর কেন্দ্র। এই পরিস্থিতি বজায় থাকলে চলতি মাসেই মূল্যবৃদ্ধির আঁচ আরও বাড়বে বলেই মনে করছে বাজার অর্থনীতি। মহার্ঘ হয়ে উঠবে মাছ, মাংস, সব্জি সহ যাবতীয় নিত্যপণ্য।
মার্চের শুরুতে অশোধিত তেলের দাম ব্যারেল পিছু ১৩৯ ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল। কয়েকদিন আগে ১০০ ডলারের নীচে নেমে যাওয়ার পর এখন সেই দর ঘোরাফেরা করছে ১০০ থেকে ১০৫ ডলারের মধ্যে। তারপরও জ্বালানির দাম কমানোর পথে হঁাটেনি কেন্দ্র। সদ্য কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান বিভাগের রিপোর্ট বলছে, প্রায় দেড় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ খুচরো পণ্যের মূ্ল্যবৃদ্ধির হার। এর প্রধান কারণ, খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়া। রিপোর্ট অনুসারে, খাদ্যপণ্যের মুদ্রাস্ফীতির হার গত মার্চে ছিল ৭.৬৮ শতাংশ। মাছ-মাংসের দামে বৃদ্ধিহার প্রায় ১০ শতাংশ ছুঁয়েছে। সব্জির দর ১০ শতাংশেরও সীমা ছাপিয়ে মার্চে ছিল ১১.৬৪ শতাংশ। ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে ১৮ শতাংশের বেশি। সেই ধারা অব্যাহত। পেট্রল-ডিজেলের সঙ্গে সরাসরি সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধির যোগ রয়েছে। তাই আশঙ্কা বাড়ছে—দাম না কমালে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। সেই আভাস এপ্রিল মাসের প্রথম ১৫ দিনেই পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন বেসরকারি সমীক্ষা অনুসারে, সব্জি, মাছ, ডিম, মাংস, ভোজ্য তেলের দাম মার্চের তুলনায় এপ্রিল মাসে আরও ঊর্ধ্বমুখী। নিয়ন্ত্রণের প্রয়াস সরকারি স্তরে দেখা যাচ্ছে না। প্রশ্ন উঠছে, আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়লে তার বোঝা যদি মানুষকে বইতে হয়, তাহলে কমলে তার সুবিধা কেন দেওয়া হবে না?
বিরোধীদের সাফ অভিযোগ, পাঁচ রাজ্যে ভোট ছিল বড় বালাই। তাই দাম না বাড়িয়ে তখন দাক্ষিণ্য দেখিয়েছিল মোদি সরকার। ভোট শেষ হলেই লাফিয়ে বাড়বে দাম—এমনই দাবি করেছিল বিরোধীরা। বাস্তবে হয়েছেও তাই। ২২ মার্চ থেকে লাগাতার পেট্রপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। পেট্রল ও ডিজেল প্রতি লিটারে বেড়েছে ১০ টাকারও বেশি। যদিও তুমুল সমালোচনার পর হঠাৎ গত কয়েকদিন ধরে আবার দাম বাড়ানো হচ্ছে না। কিন্তু বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তো দাম কমেছে। তাহলে দেশের বাজারে কেন নয়? একইসঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, রাশিয়া থেকে যে সস্তার তেল আনা হচ্ছে, সেই কম দামের সুবিধা সাধারণ মানুষ কবে পাবে? পেট্রপণ্যের দাম কমলে পণ্য পরিবহণ ব্যয় কমবে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও আসবে সাধারণের আয়ত্তে। সেই সম্ভাবনা কিন্তু দূরঅস্ত।