উপনির্বাচনেও সবুজ ঝড়! “সুকান্তর পরাজয়”-তেই কি খুশি দিলীপ-লকেটরা?
উপনির্বাচনেও সবুজ ঝড়! একদিকে, প্রয়াত নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের গড় বালিগঞ্জকে অক্ষত রাখল ঘাসফুল শিবির আর অন্যদিকে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে প্রথমবারের জন্য জোড়া ফুল ফুটল। রেকর্ড ব্যবধানে জয়ী হলেন তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা। প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে অনেকটাই পিছিয়ে বিজেপি। বালিগঞ্জ বিধানসভা আসনে ভোটের নিরিখে চতুর্থ স্থানে নেমে গিয়েছে বিজেপি। কিন্তু বিজেপির এই শোচনীয় পরাজয় সম্পর্কে কী ভাবছেন বিজেপি নেতারা? আজকের ফলাফলে খুশি দিলীপ-লকেট? এই পরাজয়কে কি সুকান্তের হার হিসেবে দেখছেন তারা?
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কাঙ্খিত সাফল্য পায়নি বিজেপি। ২০০ পেরোনোর স্বপ্ন দেখা গেরুয়া শিবির থেমেছিল ৭৭-এ, বিগত এক বছরে ছবিটা একেবারেই পাল্টে গিয়েছে। বঙ্গে বিজেপির দাপট কমেছে। বিজেপি নেতা-কর্মী-বিধায়কদের দলত্যাগে গেরুয়া শিবিরের রক্তক্ষয় ক্রমগত চলছেই। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই বঙ্গের প্রতিটি নির্বাচনে ধারাবাহিকভাবে বিজেপির ভোট কমেছে। গোষ্ঠীকোন্দলে রীতিমতো দিশেহারা বঙ্গ বিজেপি। নতুন সভাপতিকে নিয়ে দলের অন্দরেই রয়েছে একাধিক ক্ষোভ, শোনা যায় অনেকেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে কাজ করতে চান না। এমনকি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়েও বিজেপির দলীয় অসন্তোষের কথা শোনা যায়।
সম্প্রতি বঙ্গ বিজেপির বিষয়ে বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডার সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। যদিও লকেট বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বিরুদ্ধেই নাড্ডার কাছে নালিশ জানাতে গিয়েছিলেন বলেই সূত্র মারফত জানা গিয়েছিল। কিন্তু তাতেও ফল হয়নি। অন্তত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে সুকান্তের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়। অপর দিকে সুকান্ত সভাপতির পদে বসার পরেই বিজেপির কোন্দল বৃদ্ধি পেয়েছে। দলে তথাকথিত দিলীপ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচতদের কার্যত সরিয়ে ফেলেছেন সুকান্ত। এ ঘটনায় প্রকাশ্যে বিবৃতি না দিলেও, পূর্বতন সভাপতি যে খুশি হননি তা আর বলা অপেক্ষা রাখে না।
কিছুদিন আগেই বিজেপির পিকনিক বিতর্ক শুরু হয়েছিল, তারপরেই বরখাস্ত হন বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতারা। সুকান্ত-বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে লকেট বৈঠকও করেন। যা সুকান্ত-লকেট বিরোধকে আরও স্পষ্ট করে দেয়। ওই বৈঠকের পরেই তৃণমূল যোগ দেন রাজ্য বিজেপির অন্যতম প্রথম সারির নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার। সামগ্রিক ঘটনাক্রম থেকে প্রমানিত হয় যে, রাজ্য বিজেপি অন্দরে অন্দরে একাধিক ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। হয়ত দলের অভ্যন্তরেই একদিকে লকেট-দিলীপ আর অন্যদিকে সুকান্ত গোষ্ঠীর বিভাজনটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে! উপনির্বাচনে সেই অর্থে তাদের সক্রিয়তাও দেখা যায়নি।
সেই কারণেই উপনির্বাচনের এহেন ফলাফল, হয়ত বিজেপির পরাজয়ের থেকেও ‘সুকান্তের হার’ হিসেবে ‘দিলিপ- লকেট’দের কাছে বেশি মান্যতা পাচ্ছে। সুকান্তের ধারাবাহিক ব্যর্থতাই কি বঙ্গ বিজেপিতে ফের দিলীপ-লকেটদের কর্তৃত্বকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবে? আর সেই কারণেই কি নির্বাচনে বিজেপির পরাজয়ে খুশি তারা? উঠছে প্রশ্ন।