এবার নলজাতক জন্মাবে সরকারি হাসপাতালে! এসএসকেএমে শুরু হবে এই পরিষেবা
নিঃসন্তান দম্পতির জীবনে সন্তানসুখ দিতে মমতার পরশ। সরকারি উদ্যোগে দেশে প্রথম নলজাতক শিশুর জন্মের প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে শহর কলকাতায়। কৃত্রিম প্রজনন বা যে IVF চিকিৎসা পরিষেবা এতদিন ছিল মুষ্টিমেয় বেসরকারি ক্লিনিকের নিয়ন্ত্রণে, এবার তা আসতে চলেছে আমজনতার নাগালে। চলতি সপ্তাহ থেকে সপ্তাহে দু’দিন SSKM হাসপাতালে এই পরিষেবা মিলবে কলকাতার পিজি হাসপাতাল তথা ‘সেন্টার অফ এক্সেলেন্স অফ রিপ্রোডাক্টিভ মেডিসিন ইন এসএসকেএমে’।
সপ্তাহে দু’দিন আউটডোরে রোগী পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু হবে। যা রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবায় একটি মাইলফলক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এসএসকেএমে এই পরিষেবার কর্ণধার ডা. সুদর্শন ঘোষ দস্তিদারের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন নিখরচায় রাজ্যের নাগরিকরা পরিষেবা যাতে পান। সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে। যাবতীয় খরচ বহন করবে রাজ্য সরকার।”
সরকারি হাসপাতালে কৃত্রিম প্রজনন তথা IVF পরিষেবা চালুর ইচ্ছা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) দীর্ঘ দিনের। গরীব, প্রান্তিক সন্তানহীন দম্পতির জীবনে সন্তানসুখের পরশ পৌঁছে দিতে এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এশিয়ায় নলজাতক চিকিৎসার পথিকৃৎ প্রয়াত সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সহযোগী, ছাত্র ডা. সুদর্শন ঘোষ দস্তিদারকে।
সুদর্শনবাবু সম্প্রতি এই বিষয়ে একটি ‘ক্লিনিক্যাল প্রোজেক্ট’ প্রস্তাব আকারে পাঠান মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে। সেখান থেকে সেই প্রস্তাব যায় স্বাস্থ্য ভবনে। প্রস্তাবটি কার্যত লুফে নেয় স্বাস্থ্য ভবন। অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে বিশ্বমানের ল্যাবরেটরি তৈরি হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালের IVF ক্লিনিকে। তারপরই এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
সুদর্শনবাবুর কথায়, “এই কাজ শুরু করতে মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে আমায় অনুরোধ করেছেন। নিঃসন্তান দম্পতির জীবনে সন্তানলাভের আনন্দ দিতে এই সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করছি। পুরোদমে কাজ শুরু করতে ২-৩ মাস সময় লাগবে। দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাটে সুদর্শনবাবুর নিজস্ব ক্লিনিক রয়েছে। তাঁর সহযোগী হিসাবে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন লব্ধপ্রতিষ্ঠ চিকিৎসক গবেষক। এই ক্লিনিকে তাঁদেরও যুক্ত করা হবে।
পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ(পিপিপি) মডেলে কাজ হবে। ক্লিনিক তৈরি, অত্যাধুনিক যন্ত্র, ওষুধ, হরমোন চিকিৎসা থেকে সন্তানধারণের পর যাবতীয় চিকিৎসা পরিষেবাই মিলবে। খরচ বহন করবে রাজ্য সরকার। সুর্দশনবাবুর সংস্থা দেবে কারিগরি সহায়তা। চিকিৎসকদের বক্তব্য, গত তিরিশ বছরে অন্তত দু’বার এমন প্রকল্পের রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন বাম সরকার প্রকল্পটিকে ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেয়। এবার স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এই কাজ বাস্তবায়িত করতে চিকিৎসকদের প্রস্তাব দেন।
ডা. সুর্দশন ঘোষদস্তিদারের বলেন, “IVF পদ্ধতি অত্যন্ত খরচসাপেক্ষ। সরকার দায়িত্ব নিলে অন্তত গবেষণার খরচের চাপ কমে। আর মুখ্যমন্ত্রীর থেকে সেই আশ্বাস পেয়েছি বলেই ভরসা অনেক। শুধুমাত্র ব্যাপক খরচের জন্য অনেক গরিব মানুষ আইভিএফ পদ্ধতি থেকে পিছিয়ে আসে। এবার অন্তত সেই চিত্রটা মুছে যাবে।”