এবার বেসরকারিকরণের কোপ কলকাতা বন্দরে! শুরু হাসপাতাল দিয়ে
দেড়শো বছর পূর্তিতে মোদী সরকারের উপহার ছিল নামবদল। সেটা ছিল ২০২০। রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে কলকাতা বন্দরের নতুন নাম ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর তার দু’বছর বাদেই শুরু বেসরকারিকরণ! জাহাজ মন্ত্রকের পরিকল্পনা অনুযায়ী ধাপে ধাপে সেদিকে এগচ্ছে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি পোর্ট (এসএমপি) কর্তৃপক্ষ। কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের বার্থ সহ বিভিন্ন প্রকল্প বর্তমানে বেসরকারি বিনিয়োগের সাহায্যে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এবার কলকাতা বন্দরের নিজস্ব হাসপাতালেরও ‘বেসরকারিকরণ’ চাইছে কর্তৃপক্ষ। এসএমপি-র চেয়ারম্যান বিনীত কুমার সোমবার জানিয়েছেন, এই প্রকল্পে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের আশা করা হচ্ছে। অত্যাধুনিক হাসপাতালের সঙ্গে তৈরি হবে মেডিক্যাল কলেজও। গোটাটাই পিপিপি মডেলে (সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে)। বন্দর সূত্রের খবর, বেসরকারি বিনিয়োগে ৩০০ বেডের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরির জন্য ইতিমধ্যে টেন্ডার ডাকা হয়েছে।
মাঝেরহাটে ডায়মন্ডহারবার রোডের উপর প্রায় ৮ একর জমিতে অবস্থিত বন্দরের নিজস্ব হাসপাতালটি। বেড সংখ্যা ১৫০। বন্দরের বর্তমান কর্মী-আধিকারিক (সরাসরি নিযুক্ত চুক্তিভিত্তিক সহ) এবং অবসরপ্রাপ্তরা এখানে সপরিবারে নিখরচায় চিকিৎসার সুযোগ পান। মোটামুটি আধুনিক মানের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। বন্দরের সিটু অনুমোদিত কর্মী ইউনিয়নের নেতা সমরেন্দ্র মণ্ডল জানিয়েছেন, ‘হাসপাতালটি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হলে কর্মী ও অবসরপ্রাপ্তদের চিকিৎসা পরিষেবা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। আমরা এব্যাপারে আপত্তি জানাব।’ বন্দর কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই অভিযোগ মানতে রাজি নয়। তাদের দাবি, বর্তমান কর্মী ও অবসরপ্রাপ্তরা আগের মতোই চিকিৎসা পাবেন।
সদ্য শেষ হওয়া আর্থিক বছরে ১২০ কোটি টাকা নিট লাভ করেছে এসএমপি। আগেরবারের তুলনায় ১৬ কোটি টাকা বেশি। কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরে বিভিন্ন প্রকল্প চলছে পিপিপি মডেলে। হলদিয়া বন্দরে ২ নম্বর বার্থটি টেন্ডারের মাধ্যমে একটি বড় বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পণ্য পরিবহণের ব্যবস্থা হবে। বন্দর সংলগ্ন শালুকখালিতে বেসরকারি বিনিয়োগে পেট্রলিয়াম সামগ্রীর জন্য বিশেষ জেটি নির্মিত হচ্ছে। কলকাতা বন্দরের খিদিরপুর ডকে মোট ছ’টি বার্থ বেসরকারি বিনিয়োগে ঢেলে সাজা হবে। দু’টি পর্যায়ে চলবে এই কাজ। প্রথম পর্যায়ের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ। আবার জলপথে পর্যটন প্রসারের জন্য কলকাতায় জেটি নির্মাণ ও নদী তীরের সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পেও সেই মডেল চাইছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। হলদিয়া বন্দরের ৫ নম্বর বার্থটির জন্য শীঘ্রই টেন্ডার ডাকা হবে বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান। তিনি আরও বলেন, ‘আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরে প্রায় ১৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে।’ বন্দর সূত্রে খবর, এর একটা বড় অংশই বেসরকারি।
পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য কয়েকটি প্রকল্প এখন পরিকল্পনা স্তরে। তার মধ্যে অন্যতম কলকাতা বন্দর থেকে পণ্যবাহী গাড়ি হাওড়া দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য গঙ্গার তলা দিয়ে টানেল। এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য আগামী মে মাসে টেন্ডার ডাকা হচ্ছে। এখন কলকাতা বন্দর থেকে সাগর পর্যন্ত রাতে জাহাজ চলাচল করতে পারে না। ভার্চুয়াল আলোর সাহায্যে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে। জোয়ার-ভাটা পরিমাপে চালু হবে আধুনিক ব্যবস্থাও। সূত্রের খবর, বন্দরের পড়ে থাকা জমির বাণিজ্যিকীকরণের প্রস্তাব পড়ে আছে মন্ত্রকের অনুমোদনের অপেক্ষায়।