বন্ধ উত্তরবঙ্গ থেকে ভুটানে যাওয়ার সড়কপথ, মুখ থুবড়ে পড়েছে এলাকার পর্যটন শিল্প
দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে তালা ঝুলছে জয়গাঁর ভুটান গেটে। ফলে সড়কপথে উত্তরবঙ্গ থেকে ভুটানে যাওয়ার পথ বন্ধ। কবে খুলবে সেই গেট, তা অনিশ্চিত। এরই জেরে একদিকে যেমন বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছেন জয়গাঁর ব্যবসায়ীরা, তেমনই মুখ থুবড়ে পড়েছে এলাকার পর্যটন শিল্প। উত্তরবঙ্গে বেড়াতে আসা বহু পর্যটক পাহাড়, ডুয়ার্সের পাশাপাশি ভুটানে যেতে পছন্দ করেন। ট্যুর অপারেটররা সেভাবেই প্যাকেজ সাজান। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে উত্তরবঙ্গ থেকে সড়কপথে ভুটানে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যার পরনাই ক্ষুব্ধ পর্যটকরা। এদিকে, লোকসানের বহর বেড়ে চলায় ইতিমধ্যেই জয়গাঁ থেকে ব্যবসা গোটাতে শুরু করেছেন অনেকে। বন্ধ হচ্ছে একের পর এক হোটেলের ঝাঁপ। পর্যটক না মেলায় অন্য পেশা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন গাড়িচালকরা। অবিলম্বে ভুটান গেট না খুললে জয়গাঁর অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়বে, এমনটাই আশঙ্কা ব্যবসায়ী ও পর্যটন মহলের। সঙ্কটজনক এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন উত্তরবঙ্গের শিল্পোদ্যোগীদের বিভিন্ন সংগঠন বৈঠক করে সোমবার। সেই বৈঠকে ঠিক হয়েছে, শীঘ্রই থিম্পুতে গিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনে জানানো হবে বিষয়টি। একইসঙ্গে জানানো হবে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে। ট্যুর অপারেটররা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির পরই বন্ধ হয়ে যায় জয়গাঁর ভুটান গেট। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। তবুও তা খোলা হচ্ছে না। জয়গাঁয় ভুটান গেট বন্ধ থাকায় কলকাতা সহ দেশের অন্য অংশের পর্যটকদের ওই প্রতিবেশী দেশে যাওয়ার একমাত্র উপায় আকাশপথ। তাও বিমান থেকে নেমে পাঁচদিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরই মিলছে ভুটানে বেড়ানোর ছাড়পত্র। এত ঝক্কির কারণে অনেকেই ভুটানে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করছেন। ট্যুর অপারেটরদের দাবি, করোনার দাপট এখন আর নেই। ফলে কোয়ারেন্টাইন সংক্রান্ত নিয়ম শিথিল করে অবিলম্বে সড়কপথে ভুটানে যাওয়ার ছাত্রপত্র দেওয়া হোক পর্যটকদের। খুলে দেওয়া হোক জয়গাঁর ভুটান গেট।
এদিনের বৈঠকে উপস্থিত নর্থবেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুরজিৎ পাল বলেন, ভুটান গেট বন্ধ থাকায় প্রায় তিন হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অবিলম্বে এ নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ করা উচিত। গোটা উত্তরবঙ্গে একসময় শিলিগুড়ির পর জয়গাঁ থেকেই সরকারের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হতো। কিন্তু এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে।
হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ইকো ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, জয়গাঁয় ভুটান গেট খোলার ব্যাপারে জয়গাঁ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে ভুটানের সঙ্গে কথা বলা উচিত। ভুটান গেট বন্ধের জেরে যে জয়গাঁর ব্যবসায়ীদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন নর্থ ইস্টার্ন হিমালয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ট্যুর অপারেটরের সাধারণ সম্পাদক বিনয় তিখাত্রি। জেডিএ’র চেয়ারম্যান গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা বলেন, কেন্দ্রই একমাত্র ভুটানের সঙ্গে কথা বলে জয়গাঁর গেট খুলতে পারে। ফলে বিষয়টি কেন্দ্রের দেখা উচিত। স্থানীয় এমপি তথা কেন্দ্রের সংখ্যালঘু বিষয়ক রাষ্ট্রমন্ত্রী জন বারলা বলেন, আমি বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের নজরে এনেছি। এনিয়ে ফের কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলব।