শিশু সাথী প্রকল্পে বিরল অস্ত্রোপচার, নজির গড়ল এনআরএস
নাম যেমন খটমটে। রোগ তেমনই জটিল। রোগের নাম ‘টসিগ বিং অ্যানোমলি উইথ হাইপোপ্লাস্টিক অ্যাওরোটিক আর্চ’। যার বাংলা মানে করলে হয়, হৃদপিণ্ডে দু’টি নিলয়ের মাঝে ছিদ্র। এছাড়াও হৃদপিণ্ডের মূল ধমনীও অপরিণত ও সংর্কীণ। অন্তত এমনটাই বলছেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা। আর এমন জটিল সমস্যা নিয়েই জন্ম হয়েছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর হাসপাতালে জন্ম হয়, সায়ন মণ্ডলের।
এখন সায়নের বয়স ২ মাস। ওজন সাড়ে তিন কেজি। জন্মের পরই সায়নকে পাঠানো হয়, বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে এমন জটিল অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়। তাই মায়ের কোলে করে সোজা হাজির এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে এসএনসিইউ কেয়ারে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে ছিল সে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (NRS Medical College Hospital) কার্ডিওথোরাসিক সার্জেন অধ্যাপক পরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সায়নের হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচার হয়। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, শিশু সাথী প্রকল্পের আওতায় এই অস্ত্রোপচার হয়।
ছোটদের অস্ত্রোপোচার করা এমনিতেই কঠিন। তার ওপর তিন কেজি ওজনের শিশুকে অজ্ঞান করা খুব কঠিন। যে কোনও সময়ে শ্বাসপ্রশাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শম্পা দত্তগুপ্ত সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। ছিলেন ডা. বিজয় আগরওয়ালের মতো ইন্টেসিভ কার্ডিওলজিস্ট। সঙ্গে ছিলেন প্রশিক্ষিত নার্স ও টেকনিশিয়ানরা।
হার্টের ছিদ্র বন্ধ করার সঙ্গে অপরিণত মহাধমনীও কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়। কোথাও বাইরের থেকে কোষ দিয়ে আবার কোনও জায়গায় শিশুর শরীরের কোষ দিয়ে। অস্ত্রোপচার এখানেই শেষ নয়। শিশুর মহাধমনী ও পালমোনারি আর্টারি স্থানান্তর করা হয়। স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অজয় চক্রবর্তীর কথায়, “রাজ্যের কোনও সরকারি হাসপাতালে এর আগে এত ছোট শিশুর হার্টের অস্ত্রোপচার হয়নি।” প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পর এখন অনেকটাই সুস্থ সায়ন। দিন কয়েক পর বাড়ি ফিরে যাবে।