কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

গরমে কাহিল জনতা, বিক্রী নেই হালিমের, মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের

April 20, 2022 | 2 min read

নিজস্ব চিত্র

হালিমের হাঁড়ি কই? মানুষ ঢুকে যেতে পারে এমন বিশাল হাঁড়ি। তাতে থই থই হলদে রঙের থকথকে গ্রেভি। তার মধ্যে ডুবে থাকা ডুমো ডুমো মাংস। যে সুগন্ধের টানে দোকানের চারপাশে মৌমাছির মতো থিকথিকে ভিড়। সে সুখাদ্য কোথায় গিয়ে লুকোল?

জাকারিয়া স্ট্রিটকে বলা হয় কলকাতার হালিমপীঠ। ইফতারের এই ভরা সময়ে সেই জাকারিয়াতে হালিমের হাঁড়ি প্রায় অমিল। অধিকাংশ মানুষের বক্তব্য, এপ্রিলের এই খটখটে গরমে হালিম হজম অসম্ভব।

রমজানের সময় শুধু নয়, বছর জুড়েই জাকারিয়ার অলি গলিতে হালিমের হাঁড়ি মেলে। এছাড়া এসপ্ল্যানেড, মেটিয়াবুরুজ, রাজাবাজার, কড়েয়া, পার্কসার্কাস, রিপন স্ট্রিট ইত্যাদি সংখ্যালঘু প্রধান এলাকাগুলিতে সারাবছরই ভ্যানে করে হালিম বিক্রি হয়। রমজানের সময় জাকারিয়া সহ গোটা কলকাতায় হালিমের একাধিক ফুড জয়েন্ট তৈরি হয়ে যায়। এবার খোদ জাকারিয়াতেই হালিমের বেজায় কাহিল দশা।

পার্কসার্কাসে নামকরা বিরিয়ানির দোকানগুলিতে প্রতি বছরের মতো হালিম বিক্রি হচ্ছে। তবে ভিড় তুলনায় অনেকটা কম বলে জানাচ্ছেন হালিম কাউন্টারে থাকা সেলসম্যানরা। আর ক্রেতাদের বক্তব্য, সপ্তাহে একদিন হালিম খাচ্ছি। এই গরমে প্রতিদিন ‘রিচ’ খাওয়া ঠিক নয়।

হলদে রঙের গাঢ় ঝোলে ডুবে থাকা মাংসের কথা প্রথমেই উঠেছিল। হালিম তৈরির ফর্মুলা কী? বেশ কয়েকটি রেস্তরাঁর জানিয়েছে, হালিমের মূল উপাদান, বিভিন্ন রকমের ডাল, গম, বার্লি, সুগন্ধী চাল এবং মাংস। কয়েক ধরনের ডাল কয়েক ঘণ্টা ভিজিয়ে সেদ্ধ হয় চাল ও গম দিয়ে। পিঁয়াজ-রসুন-আদা বাটা, এলাচ, মরিচ, হলুদ, দারচিনি ও আরও কয়েকটি সুগন্ধী মশলা মিশিয়ে মাংস কষানো হয় আলাদা করে। পরে ডাল, চাল ও গম সিদ্ধ মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে মূল রান্নাটি হয়। তাতে বাদাম, ঘি, কাজু, কিসমিস, আমন্ড, পেস্তা দেওয়া হয়। হালিম ঢিমে আঁচে প্রায় ১০-১২ ঘণ্টা ধরে রান্না করাটাই দস্তুর। পরিবেশনের আগে যোগ করা হয় পেঁয়াজের বেরেস্তা। এবং ধনেপাতা, আদা, লঙ্কা ও লেবু। স্থান এবং রাঁধুনি ভেদে হালিমের প্রস্তুত প্রণালী পাল্টে যায়। এতকিছু দিয়ে সমৃদ্ধ খাবারটি খেয়ে উপবাস ভাঙলে দিনভর উপবাসের পুষ্টিজনিত খামতি পূরণ করা যায় বলে সবাই মনে করেন। তাই ইফতারি খানা হিসেবে এর জনপ্রিয়তা। পদটি রমজান মাসে প্রায় সব মোগলাই খাবারের দোকানেই মেলে। এবছর গরমের কারণে কম মিলছে। হালিম এল কোথা থেকে?

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, হালিমের উৎপত্তি আরব দুনিয়ার হারিস নামক এক ধরনের ডাল ও মাংসের মিশ্রণ জাতীয় খাবার থেকে। ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ইয়ামেন ইত্যাদি দেশে জনপ্রিয়। গরিবদের একসঙ্গে খাওয়ানোর জন্য বড় ডেকচিতে হারিস রান্না করা হত। ভারতবর্ষে হারিসের আগমন মুঘলদের মাধ্যমে। জনপ্রিয়তা পায় সম্রাট জালালউদ্দিন আকবরের সময়ে। এই পদটি ১৯ শতকে নিজামদের রান্নাঘরে ঢোকে। ওই সময় নিজামের ইয়েমেনী চৌশ দেহরক্ষীরা নিজেদের সনাতনী খাবার ও স্থানীয় মালমশলা মিশিয়ে তৈরি করেন হারিসের নতুন রূপ হালিম। তবে হারিস ও হালিমের মধ্যে একটা স্থুল তফাৎ আছে। হারিস হচ্ছে ভুনা। ঝুরঝুরে,শুকনো। আর হালিম নয়া চরিত্র পেয়ে হল থকথকে। ঝোল ঝোল।

চৌশদের কাছ থেকে হালিম আসে নিজামের খানসামাদের কাছে। ক্রমে নিজামের ফেভারিট হয়ে ওঠে পদটি। তারপর ধীরে ধীরে তা ভারতবর্ষের রসনাও জয় করে নেয়। এই গরমে এখনও ধীরে ব্যাট করছে হালিম। তবে ঈদ আরও এগিয়ে এলে তাকে আটকানো যাবে না। গরম উপেক্ষা করেই মানুষ ফের ঝাঁপাবেন—আশাবাদী প্রস্তুতকারকরা। কলকাতায় চিকেন ও মাটন হালিমের চাহিদাও আকাশচুম্বী।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Kolkata, #Haleem

আরো দেখুন