রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

‘৪৬ এর ডাঙায় শ্রীরামপুরে আশ্রয় নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, খোঁজ নিতে আসছেন ওপারের প্রতিনিধিরা

April 20, 2022 | 2 min read

ছবি সৌঃ এনডিটিভি

ইতিহাসের এক ‘অসম্পূর্ণ’ অধ্যায় থেকে আচমকা সরে গিয়েছে পর্দা। আর তাতেই টান পড়েছে বিস্মৃত হয়ে যাওয়া শিকড়ে। সেই টানে জুড়ে যাচ্ছে দুই বাংলার এপার-ওপার। ওপার বাংলার রূপকার বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের অজ্ঞাত জীবনপর্বের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে এপারের প্রাচীন জনপদ শ্রীরামপুর। ‘অজ্ঞাতবাস’ থেকে ১৯৪৬ সালের দাঙ্গা পর্ব— বাংলাদেশের জাতির জনককে আশ্রয় দিয়েছিল শ্রীরামপুর। এই অধ্যায় এমন সময়ে উদ্ভাসিত হচ্ছে, যখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী পর্ব চলছে। বলা বাহুল্য, ইতিহাসের সেই বিস্মৃত অধ্যায়ের ‘খোঁজ’ আলোড়ন ফেলেছে ওপার বাংলায়। শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্পর্শধন্য জনপদকে ছুঁয়ে দেখার উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা আসছেন এই বঙ্গে।

এ অনেকটা রূপকথার গল্পের মতো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ‘অসম্পূর্ণ আত্মজীবনী’র একটি অংশে উল্লেখ করেছিলেন শ্রীরামপুরের কথা। সময়কাল ১৯৪৬ সাল। পরাধীন ভারতের বঙ্গভূমে তখন দাঙ্গার আবহ। সেই আবহেই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন তাঁর ছোটভাই। সেই সময় বঙ্গবন্ধুর এক আত্মীয় থাকতেন শ্রীরামপুরে। সেখানে তাঁর বোনেরাও থাকতেন। সেই দাঙ্গা পর্বে ভাইয়ের খোঁজে এসে শ্রীরামপুরে থেকে গিয়েছিলেন মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর লেখায় রয়েছে শ্রীরামপুরের সুখ্যাতি। তিনি লিখেছেন, দাঙ্গার প্রভাব শ্রীরামপুরে দেখা যায়নি। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে বঙ্গসংস্কৃতির এ এক উল্লেখযোগ্য দলিল।

কিন্তু কোথায় ছিলেন বঙ্গবন্ধু? ইতিহাসের সরণি বেয়ে তারই খোঁজে নেমেছিলেন বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক হুগলির জিরাট কলেজের পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অনেক খোঁজের পরে মেলে ছেঁড়া ছেঁড়া অতীতের সন্ধান। সেই সময় শ্রীরামপুরের গোস্বামীপাড়ায় কয়েকঘর সংখ্যালঘুর বাস ছিল। সেখানেই কোনও একটি বাড়িতে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধু। শুধু ছেচল্লিশের দাঙ্গার সময়েই নয়, তাঁর আত্মগোপন পর্বের সঙ্গেও জুড়ে আছে শ্রীরামপুর। এমনটাই মনে করছেন পার্থবাবু এবং বাংলাদেশের ‘হাসুমণির পাঠশালা’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তাঁরা জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা পর্বের সঙ্গে কলকাতা ও হাওড়ার যোগাযোগ বহুল প্রচলিত। সেই তুলনায় শ্রীরামপুরের যোগ প্রায় অজ্ঞাতই ছিল। যা কিছুটা উস্কে দিয়েছে মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, আর কিছুটা এই বঙ্গভূমের উৎসাহীরা। তাই, সেই লুপ্তপর্বের ছোঁয়ালাগা শ্রীরামপুরে আসছেন ওপার বাংলার প্রতিনিধিরা। ওই প্রতিনিধিদলের কর্তা বাংলাদেশের সঙ্গীতজ্ঞ শামসুল হুদা ফোনে বলেন, খুবই উত্তেজনা হচ্ছে। আমাদের কাছে এ এক সোনার খনির খোঁজ। বঙ্গবন্ধুর অজ্ঞাতবাস পর্বের সঙ্গেও শ্রীরামপুরের যোগ আছে, আমাদের বিশ্বাস। আমরা ওই জায়গায় যাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছি। পার্থবাবু বলেন, আমি একা নয়, অনেকেই ওই পর্বের খোঁজে যুক্ত ছিলেন। শেওড়াফুলি রাজ পরিবারের আশিস ঘোষের নামও বলতে হবে।

এতদিন শ্রীরামপুরের ছিল ড্যানিস শাসনের অতীত। এবার তার সঙ্গে জুড়ছে স্বাধীনতার সলতে পাকানোর পর্ব। স্বাধীন বাংলাদেশের শিরোপা যিনি আদায় করেছিলেন, তাঁকেই যে বুক দিয়ে আগলেছিল এপার বাংলা, শ্রীরামপুর।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #Bangladesh, #Sheikh Mujibur Rahman

আরো দেখুন