অভিনব উদ্যোগ জলপাইগুড়িতে, হোয়াটস্যাপ গ্রুপেই বজ্রপাতের আগাম সতর্কতা পাবে চা বাগান
এবার বজ্রপাতের হাত থেকে চা বাগানের শ্রমিকদের বাঁচাতে অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করল জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন। বজ্রপাতের আগাম পূর্বাভাস জানাতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে হোয়াটস্যাপ গ্রুপ। আবহাওয়া বিভাগ, জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর, জেলা প্রশাসনের কয়েকজন আধিকারিক এবং চা বাগানের ম্যানেজার ও বাগান মালিক সংগঠনগুলিকেও গ্রুপে রাখা হচ্ছে। বজ্রপাতের তৎকাল পূর্বাভাস এই গ্রুপে দিয়ে কর্মরত চা শ্রমিকদের বজ্রপাতের থেকে আগে থেকেই নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। জেলা প্রশাসন ও আবহাওয়া বিভাগের বৈঠকে ই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলা শাসকের অনুরোধে সিকিম আবহাওয়া বিভাগের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা গোপীনাথ রাহাকে এই গ্রুপ তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসেই গ্রুপ তৈরি হবে বলে জানা গিয়েছে।
জেলা শাসক মৌমিতা বসু বলেন, “চা বাগানে একাধিক বজ্রপাতের ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানি হয়। আমরা চাই না কোনও মৃত্যুর ঘটনা ঘটুক। আবহাওয়ার বিভাগকে বলা হয়েছে, জেলার চা বাগান ম্যানেজার, মালিক সংগঠনদের নিয়ে একটি গ্রুপ তৈরির কথা। যেখানে বজ্রপাতের ঘটনার ৩ ঘন্টা আগে পূর্বাভাস পাওয়া যাবে।
বিগত ৪ বছরে রাজ্য বজ্রপাতের ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফাঁকা জায়গায় অর্থাৎ যেখানে মাথার উপর চাঁদ নেই এমন জায়গায় বজ্রপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যেমন কৃষিজমি ও চা বাগানে যারা কাজ করেন, তারা বজ্রপাতের সময় কাছাকাছি কোন গাছ তলায় আশ্রয় নেন। শ্রমিকেরা গাছ তলাকেই নিরাপদ বলে মনে করেন। কিন্তু বাজ পড়ে অনেকেই মারা যান। আহতও হন। সরকারি তথ্য পরিসংখ্যান বলছে রাজ্য ২০১৬ সালে বাজ পড়ার কারণে ১১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৭ সালে সংখ্যাটা ছিল ১৭৬। রাজ্যে ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে যথাক্রমে ১৭৯, ১৪৭ এবং ১৭০ জন মানুষ বজ্রপাতের কারণে মারা গিয়েছেন।
সিকিম আবহাওয়া বিভাগের কেন্দ্রীয় অধিকর্তার মতে, বজ্রপাতসহ ঝড়-বৃষ্টি তৎকালীন পূর্বাভাস ৩ ঘন্টা আগেই দেওয়া হয়। কৃষকদের আলাদাভাবেই জানানো হয়। যদিও চা শিল্পে এই ধরণের আগাম কোনও বার্তা দেওয়া হয় না। এই সমস্যার সমাধান করতেই উদ্যোগী আবহাওয়া দপ্তর ও প্রশাসন। গোপীনাথ রাহার মতে, “জেলা প্রশাসন চা বাগানের তালিকা, মোবাইল নম্বর দিলে আমরা গ্রুপে যুক্ত করে দেব। বজ্রপাতের পূর্বাভাস পেলে তৎক্ষণাৎ জানিয়ে দেওয়া হবে।”
ডুয়ার্স ব্র্যান্স ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের সচিব সঞ্জয় বাগচী জানান, চা বাগানগুলোতে বজ্রপাতের ঘটনায় প্রাণহানি খুব কম হলেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রশাসনের উদ্যোগ অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য। প্রশাসনের এই পরিকল্পণায় খুশি অ্যাসোসিয়েশনের উত্তরবঙ্গের সচিব সুমিত ঘোষ। ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের মুখ্য উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তীর বক্তব্য, সমস্ত বাগানকে নতুন গ্রুপে যুক্ত করা হলে খুব সহজেই বজ্রপাতের পূর্বাভাস পাওয়া যাবে। ক্ষুদ্র চা বাগানগুলোকেও এই গ্রুপে যুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন জলপাইগুড়ি জেলার ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী।