পর্যটন শিল্পের উন্নতির জন্য টাস্ক ফোর্স গড়ল রাজ্য
করোনা আবহে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল রাজ্যের পর্যটন শিল্প। কিন্তু সংক্রমণ কমতেই ফের পর্যটনমুখী মানুষ। ছন্দে ফিরছে পর্যটনকেন্দ্রগুলি। বাড়তে শুরু করেছে চাহিদা। এর মধ্যেই বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের আসরে রাজ্যের পর্যটন দপ্তরের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করল ফেডারেশন অফ অ্যাসোসিয়েশন ইন ইন্ডিয়ান ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি (ফেথ)। আর তার হাত ধরে এল তিন বছরের লগ্নির প্রতিশ্রুতি। প্রায় ৫০০০ কোটি টাকার লগ্নি প্রস্তাব এলো।
সরকারি মহলের দাবি, পর্যটনে রাজস্থান-কেরলকেও পিছনে ফেলেছে বাংলা। এ দিনের চুক্তিতে উন্নতির পথ আরও চওড়া হল। প্রশাসনিক কর্তাদের বক্তব্য, “এটি ঐতিহাসিক ঘটনা। দেশে এই প্রথম কোনও রাজ্যের সঙ্গে চুক্তি করল ফেথ।”
পর্যটন দপ্তরের প্রধান সচিব নন্দিনী চক্রবর্তীর সঙ্গে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর করেন ফেথ-এর চেয়ারম্যান নকুল আনন্দ। সংগঠনটির আওতায় সর্বভারতীয় স্তরে ১০টি সংস্থা যুক্ত। যারা পর্যটন সংক্রান্ত যাবতীয় পরিষেবা দেয়। প্রশাসনিক মহল বলছে, বাংলায় প্রাকৃতিক বৈচিত্র ছাড়াও রয়েছে, ঐতিহ্যবাহী, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, নদী সংলগ্ন এবং রোমাঞ্চকর ভ্রমণের জায়গাকে বেছে নেওয়া হচ্ছে। ফেথ সবক্ষেত্রেই পরিষেবা দেয়। সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে তাদের কর্ণধার জানান, রাজ্যের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে পর্যটনের ভাগ প্রায় ১২ শতাংশ। ফলে কর্মসংস্থানের বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাই ভিশন-২০৩৫ কর্মসূচি স্থির করে কাজ হবে বাংলা। তাদের লক্ষ্য, আন্তর্জাতিক এবং দেশের অন্তত ৩০-৫০ লক্ষ পর্যটনকে প্রতি বছর এ রাজ্যে টেনে আনা। জোর পাবে গ্রামীণ পর্যটন। রাজ্য সরকারের দাবি, বাংলায় সম্প্রতি একাধিক পর্যটন সহায়ক নীতি কার্যকর করা হয়েছে। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে তৈরি হয়েছে টাস্কফোর্স।
অবশেষ মিটল দীর্ঘদিনের দাবি। পর্যটনশিল্পের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা এবং নানা সময়ে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগগুলোর নিষ্পত্তি করতে টাস্কফোর্স তৈরি করল রাজ্য সরকার। সেই স্টেট টুরিজম প্রোমোশন টাস্ক ফোর্সের শীর্ষস্থানে থাকবেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। ১২ জন সদস্যের টাস্কফোর্সের সদস্যসচিব করা হয়েছে পর্যটন দপ্তরের প্রধানসচিব নন্দিনী চক্রবর্তীকে। বিজিবিএস থেকেই এই টাস্কফোর্স তৈরি করা হয়েছে। পাহাড় থেকে সমতল, হেরিটেজ থেকে লোকসংস্কৃতিকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটানো যায় তা খতিয়ে দেখবে এই নতুন টাস্কফোর্স।
উত্তরবঙ্গের পর্যটন শিল্পের প্রসারের জন্য দীর্ঘদিন থেকেই টাস্কফোর্স গড়ার দাবি করা হচ্ছিল। অবশেষে মিটল সেই দাবি। বিভিন্ন দপ্তরের সচিবদের টাস্কফোর্সের মধ্যে রাখা হয়েছে। মাসে মাসে মিটিং করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের সিদ্ধান্তে খুশি উত্তরের পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা।
যেখানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শিল্প গড়ে উঠেছে, সেখানকার সার্বিক পরিষেবা পরিকাঠামোর সমস্যা মেটাবে টাস্কফোর্স। অচেনা অজানা জায়গাগুলোকেও চিহ্নিত করবেন তারা। কীভাবে পরিবেশবান্ধব পর্যটন তৈরি করা যায় সেদিকেও প্রচেষ্টা চালাবেন তারা।পরিকল্পণা প্রস্তাব জমা দেবেন। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে হোমস্টেগুলোকেও। লোক সংস্কৃতিকেও তুলে ধরা হবে। বলাবাহুল্য আগামীদিনে রাজ্যের পর্যটন শিল্পে বিপুল কর্মসংস্থানের জোয়ার আসতে চলেছে। ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বহু মানুষের আয়ের সংস্থান হবে।