‘দলীয় দপ্তরের আশেপাশে মদ্যপান করিনি’, দিলীপের ‘পানশালা’ কটাক্ষে জবাব তথাগতর
দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, দলীয় দফতরকে পানশালা বানিয়েছিলেন তথাগত রায়। এ বার তার জবাব দিলেন তথাগত। জানালেন তিনি কখনও দলীয় দফতরের তিন কিলোমিটারের মধ্যে মদ্যপান করেননি। তরল বলতে পান করেছেন জল আর চা। এটা তিনি হলফনামা দিয়েও জানাতে রাজি বলে টুইট করার পাশাপাশি ফের দিলীপের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বিজেপির দুই প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত ও দিলীপের মধ্যে লড়াই চলছে তো চলছেই। মাঝে মাঝে ক্ষণিক বিশ্রাম নিলেও তর্কাতর্কি চলতেই থাকে। যা অনেক সময়ে বিজেপির কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে যায়। এ বারের বিবাদ শুরু করেন তথাগতই। গত সোমবার একটি টুইটে তিনি লেখেন ‘কেডিএসএ (কৈলাস, দিলীপ, শিবপ্রকাশ, অরবিন্দ) টিম পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির জেতা গেম হারিয়ে দিয়েছে এবং সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে কামিনী-কাঞ্চন আকণ্ঠ উপভোগ করেছে। আমার জীবনে এ রকম রাজনৈতিক ভাবে নিজের পায়ে কুড়ুল মারা আমি কখনও দেখিনি বা শুনিনি। এই কথাটা প্রকাশ্যে বলা প্রয়োজন ছিল। কারণ তা না হলে এরা যে রকম চালাচ্ছিল, তাই চালিয়ে যেত।’ আসানসোল ও বালিগঞ্জের উপনির্বাচনের ফল নিয়েও একই ভাবে আক্রমণ করেন তথাগত। লেখেন, ‘উপনির্বাচনে বিজেপির যা ফল হল তা তো অপ্রত্যাশিত নয়! শুধু শুধু দুটো মেয়েকে এই উৎকট গরমের মধ্যে ঘুরিয়ে অপমান করানো হল। বেবুন এবং ফিটার মিস্ত্রি যা মজা লুটবার, তা তো লুটে নিয়েছে। বিজেপির শোচনীয় ফল— সেটা মজা লোটারই পরিণাম। কর্মীদের মনোবল তলানিতে। পেট্রল-গ্যাসের দাম গৌণ কারণ।’ নাম না বললেও ‘ফিটার মিস্ত্রি’ বলে যে দিলীপকেই আক্রমণ করেন তথাগত, তা জানা রাজনৈতিক মহলের।
জবাব দেন দিলীপও। তথাগত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এবং তৃণমূলের থেকেও সুবিধা নিয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমে দাবি করেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পাল্টা আক্রমণ শানান তথাগত। টুইটারে লেখেন, ‘যে ফিটার মিস্ত্রিটি ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে মিথ্যা এফিডেভিট করে নিজেকে ঝাড়গ্রাম পলিটেকনিকের ডিপ্লোমাপ্রাপ্ত বলে লিখেছিলেন, এবং যা ওই পলিটেকনিক অস্বীকার করেছে, তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন নেই। কারণ, মিথ্যা এফিডেভিট করা একটি দণ্ডযোগ্য অপরাধ।’
এর পরেই দিলীপ মদ্যপান প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। বৃহস্পতিবার দিলীপ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘যাঁরা লোকের পায়ে ধরে চাকরি পেয়েছেন, যাঁরা বিজেপি পার্টি অফিসকে পানশালা বানিয়ে দিয়েছিলেন, জীবনে ফূর্তি ছাড়া কিছু করেননি, যাঁরা সিপিএম ও তৃণমূলের থেকে সব সুবিধা নিয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল বিজেপি যাতে কোনও দিনই চার শতাংশের বেশি ভোট না পায়। সেই সব আহাম্মকদের কথা কে শোনে?’’
তারই জবাব দিতে দীর্ঘ টুইট করেছেন তথাগত। লিখেছেন, ‘আমি কখনও জল ও চা ছাড়া কোনও কিছুই দলীয় দফতরের তিন কিলোমিটারের মধ্যে পান করিনি। এটা আমি হলফনামা দিয়ে বলতে পারি।’ একই সঙ্গে দিলীপকে ‘অষ্টম শ্রেণি পাশ অর্ধ-শিক্ষিত’ বলেও আক্রমণ করেছেন তথাগত। তবে এ বার সেটা করেছেন ভিন্ন প্রসঙ্গে। বৃহস্পতিবারই দিলীপ বিজেপির বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের অভিজ্ঞতা কম বলে মন্তব্য করেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে তথাগত লিখেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে দলীয় দফতরে মধুশালা তৈরি, তৃণমূলের থেকে সুবিধা নিয়ে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ তোলার পরে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে অনভিজ্ঞ বলার পিছনে কারণ কী? নিজে অষ্টম শ্রেণি পাশ বলেই কি শিক্ষিতদের সহ্য করতে পারেন না?’ একই সঙ্গে তিনি নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা, পরীক্ষার রেজাল্ট, চাকরি ক্ষেত্রের সাফল্যের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি যে ১৯৮৬ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) সঙ্গে যুক্ত, তা-ও উল্লেখ করেছেন। সঙ্গে গল্ফ খেলারত দিলীপের একটি ছবিও পোস্ট করেছেন তথাগত।
বিজেপির দুই প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির মধ্যে ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা রাজনৈতিক মহলের অজানা নয়। সেটা অনেক দিনের হলেও গত বিধানসভা নির্বাচনের পরে তথাগত নতুন করে দিলীপকে আক্রমণ শুরু করেন। কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশ এবং অরবিন্দ মেনন প্রসঙ্গেও নানা কটাক্ষ দেখা যায় টুইটে। তথাগতর আক্রমণ চরমে পৌঁছলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে ডেকে সতর্কও করেন। উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যের রাজ্যপালের দায়িত্ব সামলানো তথাগতর সঙ্গে কথা বলেন সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা স্বয়ং। তাতে তথাগতর আক্রমণ কিছু দিন স্তিমিত হলেও গত কয়েক দিনে তা ফের শুরু হয়। আর তাতে সমানে পাল্টা দিয়ে চলেছেন দিলীপও। এ সব দেখে বিজেপির এক রাজ্যনেতার বক্তব্য, ‘‘দু’জনেই প্রবীণ। নিজেদেরই থামা উচিত। তা না হলে এ লড়াই থামার নয়।’’