পাঠ্যক্রমের রাজনীতিকরণ! ফৈজ আহমেদ ফৈজের কবিতা বাদ যাওয়ায় ক্ষুব্ধ বাংলার শিক্ষাবিদেরা
বিজেপির আমলে দেশজুড়ে ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সব কিছুরই রাজনীতিকরণ চলছে, রেহাই পাচ্ছে না পাঠ্যসূচিও। নতুন শিক্ষাবর্ষে পাঠ্যক্রমে বদল এনেছে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন। এই বদলের জেরেই ফের বিতর্কের মুখে পড়েছে সিবিএসই। সিবিএসইর দশম শ্রেণির ‘ডেমোক্র্যাটিক পলিটিক্স ২’ বইতে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং রাজনীতি সংক্রান্ত অধ্যায়ে বিগত ১০ বছর ধরে উর্দু কবি ফৈজ আহমেদ ফৈজের কবিতা পড়ানো হত। এবার সেই কবিতাকেই সিলেবাস থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। যা নিয়ে গতকাল থেকেই তোলপাড় দেশের শিক্ষা মহল। বাংলার শিক্ষা মহলেও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সিবিএসইর এহেন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সরব হয়েছেন বাংলার শিক্ষাবিদেরা।
কবিতা বাদ যাওয়ার প্রসঙ্গে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার এক বেসরকারি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা একদমই উচিৎ নয়। ভারতের মতো দেশে এই ধরনের কবিতার প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের যা সকলের সামনে তুলে ধরেছিলেন, সেখানে ভারতের আত্মপরিচয়ের সঙ্গে গণতন্ত্র এবং বৈচিত্র্যর এই ধারনাটি খুব জরুরি। এই সিদ্ধান্ত খুব দুর্ভাগ্যজনক। আমি খুবই ক্ষুব্ধ। কারা করছে, কেন করছে জানিনা, কিন্তু খুবই অন্যায় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পবিত্র বাবুর মতোই বাংলার আরেক শিক্ষাবিদ আবদুল মতিনকেও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক। ভারতীয় উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী লেখকদের মধ্যে ফৈজ আহমেদ ফৈজ একজন অন্যতম প্রধান মুখ। স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় এই কবির অবদান কখনও মুছে ফেলা যায়না। এই ধরনের একজন প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তির লেখা বাদ দেওয়া সত্যিই হতাশাজনক। শিক্ষার কোনও গণ্ডি হয় না। আমরা এখানে প্লেটো পড়ি, অ্যারিস্টটল পড়ি, ইউরোপীয়ান স্কলারদের লেখা পড়ি। কিন্তু এখন যদি সমস্ত স্বাধীন লেখকের-কবিদের লেখা বাদ দেওয়া হয় তাহলে কিছু বলার থাকে না। হয় তো বাদ দিতে দিতে আমরা একদিন এমন একটা জায়গায় গিয়ে দাড়াব তখন আর পড়ার কিছু থাকবে না।’
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কেবল কবিতাই বাদ পড়েনি! পাশাপাশি ‘গণতন্ত্র এবং বিবিধ’ বিষয়ক অধ্যায়ও বাদ গিয়েছে। ‘সেন্ট্রাল ইসলামিক ল্যান্ডস’ নামের একটি অধ্যায় সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এই অধ্যায়টিতে এশিয়া এবং আফ্রিকায় ইসলামিক শাসকদের শাসনকালের গতিপ্রকৃতি নিয়ে পড়ানো হত। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন সিলেবাস পড়ানো হবে বলে জানা গিয়েছে। তবে এই প্রথম নয়, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণির সিলেবাস থেকে যুক্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামো, নাগরিকত্ব, জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতার চ্যাপ্টারগুলি বাদ দেওয়া হয়েছিল। যা নিয়ে সেই সময় দেশজুড়ে তুমুল বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই কেন আহমেদ ফৈজের কবিতা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তা নিয়ে সিবিএসই বোর্ডের কর্তাদের কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।