এবার মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন অর্জুন, কী বললেন ব্যারাকপুরের সাংসদ?
এবার বিদ্রোহী অর্জুন সিং। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি আন্দোলনে নামতে চলেছেন বারাকপুরের বিজেপি এমপি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে তিনি জানিয়ে এসেছেন, এছাড়া আর অন্য পথ নেই। কারণ, বারবার রাজ্যের মানুষের জন্য দাবি জানিয়ে তিনি হতাশ। তাঁর নিজের দল কেন্দ্রের সরকারে থাকা সত্ত্বেও বাংলার মানুষের জন্য কিছুই করছে না। অর্জুন সিং নিজেই বলছেন, ‘রাজ্যের ১৪টি জুট মিল বন্ধ। আরও ১০টি বন্ধের মুখে। জুটমিল শ্রমিক, পাটচাষি এবং তাঁদের পরিবারবর্গ মিলিয়ে আড়াই কোটি মানুষ চরম সঙ্কটে। এ নিয়ে কেন্দ্রের একাধিক মন্ত্রকে বহুবার আবেদন নিবেদন করেছি। চিঠি লিখেছি শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রকে। কিন্তু কেন্দ্র কর্ণপাতই করেনি। এবার রাস্তায় নেমে আন্দোলন করা ছাড়া উপায় নেই।’ তিনি বলছেন, ‘আমার রাজনৈতিক উত্থান, কর্মকাণ্ড—সবই জুটমিল কর্মীদের ঘিরে। আমি আগে তাঁদের স্বার্থ দেখব। কোন দল, কোন সরকার কী মনে করল, আমার কিছু যায় আসে না।’ স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, অর্জুন সিং কি তাহলে বিজেপি ছাড়ছেন? ফিরছেন তৃণমূলে? সূত্রের খবর, কেন্দ্রের থেকে সাড়া না পেলে জুন মাসের মধ্যেই এমন সিদ্ধান্ত তিনি নিতে পারেন।
রবিবার রাতে দিল্লিতে এসেছেন অর্জুন সিং। আজ, সোমবার সকালে কেন্দ্রীয় জুট বোর্ডের বৈঠকে তিনি অংশ নেবেন। সেখানেও কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে সরব হবেন তিনি। একজন বিজেপি এমপি রাজ্যের সমস্যা নিয়ে বারবার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন, অথচ কেন্দ্র উদাসীন। কেন? উত্তরে বিস্ফোরক অর্জুন সিং, ‘আসলে বিজেপি সরকার, আর মন্ত্রকে বসে থাকা লোকেরা আকাশপুত্র। আকাশেই বিচরণ করেন। তাঁরা ধরিত্রীপুত্রদের সমস্যা, দারিদ্র্য বা জীবিকার সঙ্কট বুঝবেন কীভাবে?’ জানা যাচ্ছে, অর্জুন সিং গত ১৯ এপ্রিল শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলকে চিঠি লিখেছেন। তাতে বলেছেন, জুট কমিশনার নির্ধারিত সিলিং প্রাইস প্রত্যাহার, ট্যারিফ কমিশনারের রিপোর্ট অগ্রাহ্য করা ইত্যাদি বিষয়ে জুট মিলগুলি চরম সঙ্কটে পড়েছে। অর্জুন সিংয়ের দাবি, ট্যারিফ কমিশনের সিদ্ধান্ত মেনে কর্মীদের গ্র্যাচুইটি অন্তত মিটিয়ে দেওয়া হোক! সেটাও করা হচ্ছে না। এই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তগুলির কারণেই রাজ্যে প্রচার চলছে, বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকার শ্রমিক বিরোধী। সেই প্রচার স্বাভাবিক কারণেই বিশ্বাস করছেন শ্রমিকরা। অর্জুন সিং এই চিঠিতে পীযূষ গোয়েলকে সাতদিনের সময়সীমা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই সাতদিনের মধ্যে আপনার পক্ষ থেকে কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলে একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাকে মানুষের পাশে থাকার দায়িত্ব পালন করতে হবে।’ কী করবেন? অর্জুন সিং বলেছেন, ‘জুট কমিশনারর অফিস ঘেরাও করব। রাস্তায় অবস্থান করব। আমি খুব আপসেট।’ অর্জুন সিংয়ের তোপ, ‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রক চালাচ্ছে আমলাতন্ত্র। বারবার বলেও মানুষের সমস্যার কথা মন্ত্রীকে বোঝাতে পারছি না।’ কিন্তু আপনার দল এ ব্যাপারে কী বলছে? অর্জুন সিংয়ের বক্তব্য, ‘দলের ভূমিকা আমার কাছেও স্পষ্ট নয়।’
২০১৯ সালে অর্জুন সিং বারাকপুর লোকসভা আসনে তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে দলত্যাগ করেছিলেন। বিজেপির প্রার্থী হিসেবে ওই আসনেই জয়ী হন তিনি। এবার অর্জুন যদি দলের আচরণ ও কেন্দ্রের সিদ্ধান্তহীনতায় বীতশ্রদ্ধ হয়ে সত্যিই বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেন, তাহলে বঙ্গ বিজেপির জন্য অপেক্ষা করছে ফের বিরাট বড় ধাক্কা।