কেন্দ্রের বঞ্চনার শিকার ছোট শিল্প, বকেয়া ১৬ হাজার কোটি
কোথাও বাকি রেখেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। আবার কোথাও টাকা মেটায়নি খোদ কেন্দ্রীয় সরকারি দপ্তরই। সবমিলিয়ে কেন্দ্রের কাছে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলির নগদ পাওনা ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। তিন বছর ধরে সেই বকেয়া ফেলে রেখেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। মুখে ছোট শিল্পের নামে কেন্দ্র বড়াই করলেও এক্ষেত্রে গড়িমসি চলছে। ফলে সঙ্কটে পড়েছে শিল্প সংস্থাগুলি। কবে সেই প্রাপ্য মেটানো হবে, তা জানে না কেউ। সদ্যসমাপ্ত বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে ছোট শিল্পকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু এই শিল্পের প্রতি কেন্দ্রের উদাসীনতা অতি প্রকট হয়ে পড়েছে।
হিসেব বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের শুরু থেকে গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত তিন বছরে ছোট শিল্পের কাছে কেন্দ্র বাকি রেখেছে ১৬ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। প্রায় ৬০ হাজার সংস্থার প্রাপ্য আটকে রয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প সংস্থাগুলির প্রাপ্য অর্থের অঙ্ক প্রায় ৭১০ কোটি টাকা। এখানে প্রায় ৪ হাজার ৪০০ সংস্থা পাওনা চেয়ে আবেদন করেছে। কিন্তু মেটানো হয়নি সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি সংস্থার টাকা। শিল্প মহলের অভিযোগ, কেন্দ্রের কাছে বিপুল পরিমাণ টাকা বকেয়া থাকায় মূলধন সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। করোনার কারণে এমনিতেই বেশিরভাগ শিল্প সংস্থার আর্থিক হাল ততটা ভালো নয়। নগদ জোগানেও টান রয়েছে। নোটবন্দি এবং তারপর সুষ্ঠু পরিকাঠামো ছাড়াই তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর সিদ্ধান্ত ছোট শিল্পকে সঙ্কটে ফেলেছে। তার উপর ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ ছিল করোনা মহামারী পরিস্থিতি। এরপর যদি অর্ডার সরবরাহের পরও টাকা না মেলে, তাহলে সঙ্কট যে আরও বাড়বে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ছোট শিল্প সংস্থাগুলিকে সরকারের ৪৫ দিনের মধ্যে বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়ার কথা। তারা যদি তা না দেয়, তাহলে অভিযোগ করা যায় কেন্দ্রীয় সরকারি নির্দিষ্ট পোর্টালে। রাজ্য সরকারি সংস্থা বা রাজ্য সরকারের কোনও দপ্তরের থেকে যদি টাকা পাওনা হয়, তাহলে সেই অভিযোগ জানানোর জন্যও ওই পোর্টাল ব্যবহার করা যায়। রাজ্যগুলিতে একটি নির্দিষ্ট পরিকাঠামো থাকে, যেখানে ওই অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখা হয়। কেন্দ্রীয় পোর্টাল থেকে সরাসরি সেখানে অভিযোগ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গেও ছোট শিল্পের বকেয়া সংক্রান্ত অভিযোগের নিষ্পত্তির জন্য একটি ফেসিলিটেশন কাউন্সিল আছে। ক্ষুদ্র, ছোট ও মাফারি শিল্প দপ্তরের আওতায় কাজ করে এই কাউন্সিল।
কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য এবং ফেডারেশন অব অ্যাসোসিয়েশনস অব কটেজ অ্যান্ড স্মল ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট হিতাংশুকুমার গুহ বলেন, ‘আমরা কেন্দ্র এবং রাজ্য— দু’টি ক্ষেত্রেই বকেয়া টাকার অভিযোগ পাই। রাজ্য সরকারের কোনও দপ্তর হোক, বা রাজ্য সরকারি সংস্থা বা কোনও পুরসভা— টাকা যারাই আটকে রাখুক না কেন, অভিযোগ জমা পড়লে, তারা ছোট শিল্পকে বকেয়া মিটিয়ে দেয়। কিন্তু কেন্দ্র বা কেন্দ্রীয় সংস্থার ক্ষেত্রে আমরা টাকা মেটানোর যে নির্দেশ দিই, তা অনেক ক্ষেত্রেই সুষ্ঠুভাবে কার্যকর হয় না। এক্ষেত্রে তারা আদালতের দ্বারস্থ হলে, সেখানে বকেয়া টাকা পাওয়ার বিষয়টি আরও জটিল ও দীর্ঘতর হয়ে যায়। আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে, ৪৫ দিনের মধ্যে টাকা মেটানোর নিদান থাকলেও, দু’বছর পেরিয়ে গেলেও সেই টাকা ফিরে পায় না বহু সংস্থা। ছোট শিল্পের ক্ষেত্রে সত্যিই তা সুখের নয়।’