রাজ্যে প্রবল তাপপ্রবাহ নিয়ে হরেক মিমের বন্যা সোশ্যাল মিডিয়ায়
বাজার থেকে আলু কিনে হাঁটা লাগিয়েছিলেন প্রভাসবাবু। বাড়ি ফিরে দেখলেন পথেই সিদ্ধ হয়ে গিয়েছে আলু। শ্রীপতি প্রামাণিক আরও এক কাঠি সরেস। যমপুরীর ফুটন্ত তেলের কড়াইয়ে সিদ্ধ হতে হতে যমরাজকে টেক্সট করছেন, আমার বাড়ির বিছানা এর থেকে গরম। শাস্তিটা ঠিক জমল না স্যার।
তুহিন মহাপাত্রর আঁকা ছবিটাও মোবাইলে খুব ছড়িয়েছে। দুপুরে বিছানায় আধশোয়া তিনি। পাখা চলছে মাথার উপর। হাওয়ার বদলে নামছে আগুনের ফুলকি।
কয়েকজন আবার গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানও বদলে ফেলে কক্ষপথের বর্তমান অবস্থান পাঠাচ্ছেন বন্ধুদের।
সৌমিত্রবাবু যেন লরেন্স অব অ্যারাবিয়া। সাদা, মাথা-মুখ ঢাকা পোশাকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এসপ্ল্যানেড মোড়ে। ছবির তলায় লিখছেন, অ্যাপে উট ডেকে পাঠিয়েছি। যাব হাতিবাগান।
তীব্র উত্তাপ আর বৃদ্ধি পেতে থাকা আর্দ্রতার জোড়া ফলায় ম্রিয়মান নগরবাসী খুঁজছেন সামান্য স্বস্তির অবকাশ। সোশ্যাল মিডিয়ার দিগন্তহীন ময়দানের চেয়ে উত্তম জায়গা আর কী হতে পারে? বাইরের মাটি ফুটিফাটা হলেও মনটাকে ভিজিয়ে দিচ্ছেন মিমের বন্যায়। হাবুডুবু খাচ্ছেন সেই প্রবাহে। মিমের ঝাঁকায় চিতা সাজানো থেকে থেকে যমরাজের ফুটন্ত কড়াই, উট থেকে মরুভূমি—সবার শুষ্ক ঠোঁট হাসিতে ভেজাচ্ছে।
‘ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুইন, চরণ তলে বিশাল মরু দিগন্তে বিলীন…।’ বড়িশায় দাঁড়িয়ে লস্যির অর্ডার দিয়ে রবি ঠাকুর আউড়াচ্ছিলেন বঙ্কুবাবু। পাশ থেকে খ্যাঁক করে উঠলেন স্ত্রী—‘কী হাতিঘোড়া লাভ হত শুনি’? ‘কী যে বল গিন্নি, বেদুইন হলে একটা উট থাকত আমার। তোমাকে নিয়ে মরুদ্যান যেতাম গো’— সরস বঙ্কুবাবু। গতকালই তাঁর বন্ধু শ্যামলবাবু জিজ্ঞেস করছিল, অ্যাপ ক্যাবগুলি উট ভাড়া দিতে পারে, বল। কলকাতা তো এখন একটা মরুভূমি-ই। তাই না? মোক্ষম সময়ে রসিকথাটা শুনিয়ে স্ত্রীর কাছে মুখঝামটা খেয়েও মিটিমিটি হাসতে হাসতে লস্যিতে চুমুক বঙ্কুবাবুর।
পেশায় শিক্ষক বঙ্কুবাবু। স্ত্রী কিছু বললে রা-কাড়েন না। তা বলে ক্লাস নেওয়ার সময় কেউ টুঁ শব্দ করলে কঠিন শাস্তি দিয়ে থাকেন। জীবনবিজ্ঞান শিক্ষক বঙ্কুবাবু কংক্রিটের জঙ্গলে দাঁড়িয়ে ভাবছেন, গরম নিয়ে টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে রসের বন্যার প্রতিচ্ছবির মাঝে একবারও কী পরিবেশ নিয়ে কেউ ভাবছেন? নির্বিচারে গাছ কাটার আগে বোঝা উচিত ছিল প্রতিশোধ নিতে পারে উষ্ণায়নও। বঙ্কুবাবু মোবাইলে লিখলেন, ‘নগরায়নের নামে যথেচ্ছ সবুজ নিধন বন্ধ হবে কবে? পরিবেশ সবে প্রতিশোধ নেওয়া শুরু করেছে। এরপর সে আরও ভয়ঙ্কর রূপ নেবে। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমরা কী ছেড়ে যাব? ভেবে দেখছেন কি?’ লিখলেন বটে তবে কাউকে পাঠাতে বড়ই দ্বিধান্বিত বঙ্কুবাবু। কেউ কি আমল দেবেন? আমাকে নিয়ে মিম শুরু হবে না তো? পাঠালেন না শেষপর্যন্ত। দহনে ক্লান্ত হওয়া চোখ দুটো বন্ধ করে যেতে চাইলেন, দু’শতক আগের শ্যামল এক দুনিয়ায়।