খেলা বিভাগে ফিরে যান

মণিপুরকে ৩-০ গোলে পরাজিত করে সন্তোষ ট্রফির ফাইনালে বাংলা

April 29, 2022 | 3 min read

মণিপুরকে ৩-০ গোলে পরাজিত করে সন্তোষ ট্রফির ফাইনালে বাংলা। আজকে অবধি এই নিয়ে ৪৬তম বার সন্তোষ ট্রফির ফাইনালে উঠলো বাংলা। এর আগে সন্তোষ ট্রফিতে ৩২ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলা, ১৩ বার রানার্স আপ।

সাত মিনিটের মধ্যে বাংলা যখন দু গোল করে ফেলল তখনই ঠিক হয়ে গেল যে এবারের সন্তোষ ট্রফির ফাইনালে বাংলাকে মুখোমুখি হতে হবে কেরালার। শেষ পর্যন্ত বাংলার জয়ের ব্যবধান হল তিন গোলের। কিন্তু মণিপুর লড়াই ছাড়েনি। তারাও চেষ্টা করে গেছে গোল করার। কিন্তু বাংলার ডিফেন্ডারদের পিছনে ফেললেও মণিপুর টপকাতে পারেনি বাংলার গোলকিপার প্রিয়ন্ত সিংকে। তিন গোলে জেতা ম্যাচে গোলকিপারের ভূমিকা খুব একটা চোখে পড়ে না। কিন্তু প্রিয়ন্তের কথা বলতেই হবে। এই পঞ্জাব তনয় গোটা টুর্নামেন্টটাই ভাল খেললেন। এখন দেখতে হবে আগামী সোমবার, দোসরা মে, ফাইনালে তিনি উতরে দিতে পারেন কি না বাংলাকে। বৃহস্পতিবার কেরালা ৭-৩ গোলে হারিয়ে দিয়েছে কেরালাকে। তাদের হয়ে একাই পাঁচটি গোল করেছেন টি কে জেসিন।

দু দিন আগে বাংলার হোটেলে এসে ফুটবলারদের উৎসাহ দিয়ে যান কেরালার কিংবদন্তী কোচ টি কে চাটুনি। মোহনবাগানকে প্রথম আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন তিনি সেই ১৯৯৮ সালে। সেই থেকে চাটুনির সঙ্গে বাংলার একটা আত্মিক সম্পর্ক হয়ে গেছে। চাটুনি মিনিট পনেরো ক্লাসও নেন ফারদিন মোল্লাদের। তিনি সেদিন আশা করে গিয়েছিলেন বাংলা-কেরালা ফাইনাল হবে।

শেষ পর্যন্ত সেটাই হতে চলেছে। শুক্রবার মঞ্জেরি স্টেডিয়ামে সে রকম দর্শক হয়নি। একে তো গরম। তার উপর রমজান চলছে। কিন্তু যে হাজার কয়েক দর্শক মাঠে ছিলেন তাদের বেশির ভাগই সমথর্ক ছিলেন বাংলার। এবং তাদের মন জয় করতেই যেন বাংলা দু মিনিটের মধ্যে গোল করে ফেলল। বক্সের বাইরে থেকে মিডফিল্ডার সুজিত সিং ডান পায়ে যে জোরালো শটটা নিলেন তা গোলকিপার মিতাইয়ের হাতে লেগে গোলে ঢুকে যায়। শুরুতেই গোল পেয়ে গিয়ে বাংলা দ্বিগুণ উৎসাহে ঝাঁপিয়ে পড়ে মণিপুরের উপরে। এবং মিনিট পাঁচেক যেতে না যেতেই আবার গোল করে ফেলে রঞ্জন ভট্টাচার্যের ছেলেরা। এবার গোল করেন ফারদিন আলি মোল্লা। বক্সের বাইরে তখন একটা আক্রমণ রোখার চেষ্টা করছিল কেরালা। বলটা হঠাৎ করে চলে আসে ফারদিনের পায়ে। কাউকে কিছু ভেবে ওঠার সুযোগ না দিয়ে ফারদিন দুর্দান্ত ভলি নেন। গোলকিপারকে কোনও রকম সুযোগ না দিয়ে বল গোলে ঢুকে যায়। দুটো গোলের ক্ষেত্রেই গোলকিপারকে দায়ী করা যেতে পারে। এবং হয়তো সে জন্যই কুড়ি মিনিটের মাথায় মিতাইকে বদলে মহম্মদ আবুজারকে নামান মণিপুর কোচ।

দু গোলে পিছিয়ে পড়েও কিন্তু মণিপুর লড়াই ছাড়েনি। ছোটখাটো চেহারা তাদের ফুটবলারদের। কিন্তু অফুরন্ত দম তাদের। খুব বেশি দৌড়ইনি তারা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাস খেলে বাংলার ডিফেন্সকে ব্যতিব্যস্ত রাখে। একটার পর একটা কর্নার আদায় করতে থাকে। কিন্তু তাদের উচ্চতা বেশি না হওয়ায় বাংলার ডিফেন্ডার মনোতোষ চাকলাদার কিংবা শুভেন্দু মান্ডিকে বিব্রত করতে পারেনি। যদি বা তাদের মাথা টপকে হেড বা শট নিতে পারল, কিন্তু তাদের সামনে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়ালেন প্রিয়ন্ত সিং। কত বার যে প্রিয়ন্ত মণিপুরের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই।

মাঝ মাঠে সুজিত শুধু গোলই করেননি, দলকে খেলানোর পিছনে তাঁরও একটা বড় ভূমিকা ছিল। তাঁর পাশে মানানসই ছিলেন বাসুদেব মান্ডি। বাংলা এদিন তিন ফরোয়ার্ডে খেলেছে। মাঝ খানে মহীতোষ রায়কে রেখে দুই উইংয়ে ফারদিন আর দিলীপ ওরাঁও।৭৪ মিনিটে দিলীপের গোলটি অবস্য পড়ে পাওয়া। বাঁ দিক থেকে তিনি সেন্টার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর সেন্টার বাঁক খেয়ে গোলে ঢুকে যায়। এ বারও গোলকিপারের দোষে গোল পায় বাংলা। তবে তাদের প্রাধান্য নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলা যাবে না। গ্রুপ লিগে কেরালার কাছে দুটো এবং মেঘালয়ের কাছে তিনটে গোল খেয়েছিল বাংলা। সেই তুলনায় এদিন বাংলার ডিফেন্স অনেক ভাল খেলেছে। আর সবার উপরে ছিলেন প্রিয়ন্ত। সোমবার ফাইনালে নিজেদের মাঠে হাজার তিরিশ সমর্থকের সামনে কেরালা অবশ্যই ট্রফি জয়ের ব্যাপারে ফেভারিট। কিন্তু বাংলা এখন যে স্পিরিটে আছে তাদের হারানো শুধু কঠিনই না, বেশ কঠিন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Bengal, #Manipur, #Santosh Trophy

আরো দেখুন