বেগমপুরী তাঁত থেকে শান্তিনিকেতনের বাটিক, জিআই তকমা পেতে তদ্বির রাজ্যের
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে আঞ্চলিক পণ্যের গুরুত্ব বাড়াতে জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই’র উপর বিশেষ জোর দিচ্ছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি পণ্যের জিআই’র জন্য আবেদন করেছে রাজ্য, যেগুলি স্বীকৃতির অপেক্ষায় রয়েছে। সেই তালিকায় যুক্ত হল আরও তিনটি পণ্য। সেগুলি হল হুগলির বেগমপুরি তাঁত, পুরুলিয়ার লাক্ষা এবং শান্তিনিকেতনের বাটিক। বেগমপুর হ্যান্ডলুম ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির উদ্যোগে বেগমপুরি তাঁতের শাড়ির জন্য জিআই’র আবেদন করা হয়েছে। বলরামপুরের একটি শিল্প সমবায় সমিতির তরফে ওই অঞ্চলের লাক্ষার উপর জিআই’র আবেদন করা হয়েছে। অন্যদিকে, শান্তিনিকেতনের যে বাটিক প্রিন্টের বিশ্বজোড়া খ্যাতি, তারও জিআই স্বীকৃতি চান সেখানকার ব্যবসায়ীরা। তাই শান্তিনিকেতন হ্যান্ডিক্র্যাফ্টস অ্যান্ড টেক্টাইলস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের তরফে এই আবেদন করা হয়েছে। গত ১৯ এপ্রিল জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন রেজিস্ট্রিতে আবেদনগুলি জমা পড়েছে। প্রতিটি দ্রব্যই যে সেই অঞ্চলেরই নিজস্ব সম্পদ, তার যথাযথ তথ্য ও প্রমাণ সাপেক্ষে মিলবে জিআই।
কোনও একটি নির্দিষ্ট এলাকা বা অঞ্চলে যদি কোনও বিশেষ দ্রব্য পাওয়া যায় বা উৎপাদন করা হয়, তাহলে ওই অঞ্চলের নাম জড়িয়ে সেই পণ্যটির জিআই তকমা মেলে। তাতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সুবিধা পায় ওই পণ্য। সম্প্রতি বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনেও এই ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে রাজ্য সরকার। ভারতে জিআই তকমা চালু করার সময় থেকে বাংলায় এখনও পর্যন্ত ২২টি পণ্য সেই স্বীকৃতি পেয়েছে। যে পণ্যগুলি জিআই পেয়েছে, সেগুলির উপর একটি বইও প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাণিজ্য সম্মেলনের ঠিক আগেই তাঁত, লাক্ষা ও বাটিকের পাশাপাশি জিআইয়ের আবেদন করা হয়েছে কলকাত্তি গয়নার উপরও। রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমও বিভিন্ন শিল্প সংগঠনকে বার্তা দিচ্ছে, জিআই পাওয়া পণ্যের সংখ্যা যদি বাড়ানো যায়, তাহলে আখেরে শিল্পমহলেরই লাভ। প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে জিআই’র জন্য যে যে আবেদনগুলি জমা রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম সুন্দরবনের মধু, কৃষ্ণনগরের সরভাজা ও সরপুরিয়া, শান্তিপুরি তাঁতের লোগো, গরদের শাড়ি, মসলিন প্রভৃতি। ইতিমধ্যেই জিআই স্বীকৃতি মিলেছে বাংলার যে যে পণ্যের, সেগুলির মধ্যে অন্যতম দার্জিলিং চা, লক্ষ্মণভোগ আম, হিমসাগর আম, মালদহের ফজলি আম, নকশি কাঁথা, শান্তিনিকেতনের চর্মশিল্প, শান্তিপুরি তাঁত, বালুচরি শাড়ি, ধনেখালি তাঁত, বর্ধমানের সীতাভোগ ও মিহিদানা, জয়নগরের মোয়া, বাংলার রসগোল্লা, তুলাইপাঞ্জি ও গোবিন্দভোগ চাল, ডোকরা প্রভৃতি।