পশু দত্তক দিয়ে প্রায় সাড়ে তেরো লক্ষ টাকা আয় বাড়ল আলিপুর চিড়িয়াখানার
মাসিক চুক্তিতে দত্তক নিতে ব্যাপক সাড়া মিলছে। ছ’মাসেই চিড়িয়াখানায় ৯০ এর বেশি সদস্য অভিভাবক পেল। এদের মধ্যে অধিকাংশই মাসিক চুক্তিতে দত্তক নেওয়া হয়েছে। সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখীকালেও দত্তক নেওয়া হয়েছে একাধিক পশুপাখি। দত্তক দিয়ে চিড়িয়াখানায় কোষাগারে এসেছে প্রায় ১৩ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা।
বাঘ, সিংহ, হাতি যেটি পছন্দ সেটি পাবেন। চাইলে অ্যানাকোন্ডা, জিরাফ, জেব্রা শিম্পাঞ্জিও নিতে পারবেন। আলিপুর চিড়িয়াখানায় পশুপাখি দত্তক দেওয়া হয়। আর্থিক খরচভার বহন করলে পছন্দের পশুপাখিদের দত্তক নেওয়া যাবে। অবশ্য অভিভাবকরা এদের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবেন না। চিড়িয়াখানায় এসে দেখা করতে পারবেন তাঁরা।
২০১৫ সালে চিড়িয়াখানায় পশুপাখি দত্তক প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছিল। ১৮ হেক্টর জমিতে ১০০০-এরও বেশি বণ্যপ্রাণী রয়েছে। প্রথমে বার্ষিক চুক্তিতে দত্তক দেওয়া হত। একটি বাঘ, সিংহ কিংবা হাতি দত্তক নিতে হলে বছরে দু’ লক্ষ টাকা দিতে হয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে। চিতা, জিরাফ মিলবে ১ লাখে। শিম্পাঞ্জি ৩০ হাজার টাকায়। বাঘরোল, জেব্রা ৩০ হাজার। অ্যানাকোন্ডা মিলবে ২৫ হাজার টাকায়। এমুপাখি ১০ হাজার।
চিড়িয়াখানায় প্রচুর দর্শক আসে। অনেকে দত্তক নিতে আগ্রহ দেখান। কিন্তু সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলাত না। সাধারণ মানুষের সাধ্যের কথা ভেবে গত সেপ্টেম্বর থেকে মাসিক দত্তক প্রক্রিয়া চালু করেছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। সঙ্গে অনলাইনে দত্তক প্রক্রিয়াও চালু করা হয়।
করোনার জন্য অনেকদিন চিড়িয়াখানা বন্ধ ছিল। অনলাইনে দত্তক প্রক্রিয়ার কাজ অবশ্য বন্ধ ছিল না। আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত বলেন, “গত বছর থেকে নতুন করে দত্তক প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। বার্ষিক চুক্তির পাশাপাশি মাসিক চুক্তি চালু করার পর দত্তকে ভাল সাড়া মিলছে। স্কুল—কলেজ পড়ুয়ারাও দত্তক নিতে এগিয়ে আসছেন। এখন পর্যন্ত চিড়িয়াখানায় ৯০-এর বেশি সদস্যকে দত্তক নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই মাসিক চুক্তিতে নেওয়া হয়েছে।
তাঁর কথায়, এত সংখ্যক সদস্য দত্তক নেওয়া আগে কখনও হয়নি। কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় জু অথরিটির মেম্বার সেক্রেটারি সঞ্জয়কুমার শুক্লা পরিদর্শনে এসে চিড়িয়াখানায় মাসিক চুক্তিতে দত্তক প্রক্রিয়া চালু করা নিয়ে প্রশংসা করেছেন। একটি চিড়িয়াখানায় এত সংখ্যক পশুপাখি দত্তক নেওয়া নজিরবিহীন ঘটনা বলেও জানিয়েছিলেন।
শিম্পাঞ্জি বাবুকে এবারও বার্ষিক চুক্তিতে দত্তক নিয়েছেন অভিনেতা সপ্তর্ষি মৌলিক এবং সোহিনী সেনগুপ্ত। সোহিনী সেনগুপ্ত বলেন, ছোটবেলা থেকে বাবুকে খুব ভাল লাগত। বাবুর টানে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যেতাম। যখন শুনলাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ পশুপাখি দত্তক দিচ্ছে তখনই বাবুকে দত্তকের জন্য আবেদন করি। গত বছর থেকে বাবুর দায়িত্ব নিয়েছি। ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতেও বাবুর দায়িত্ব নিতে পারব। বাবুর পরিবারের আরও দুই সদস্য ছটু ও মস্তান সম্প্রতি অভিভাবক পেয়েছে। একজনকে এক বছরের চুক্তিতে দত্তক নেওয়া হয়েছে আর একজন মাসিক চুক্তিতে। টালিগঞ্জের বাসিন্দা হাওড়া সিটি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার হেড কোয়ার্টার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য চিড়িয়াখানায় একটি হায়না এক বছরের জন্য দত্তক নিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী রোশনি দাস ভট্টাচার্য একটি পেঁচা এবং ইগুয়ানা দত্তক নিয়েছেন।
অভিভাবক পেয়েছে হাতি রানি ও তিমির। একটি হলুদ অ্যানাকোন্ডাও দত্তক আছে। তবে বাঘ সিংহদের দত্তক নিতে সেভাবে কেউ এগিয়ে আসছে না। ২০২০ সালের পর থেকে আর কোনও অভিভাবক পায়নি সিংহ শ্রুতি বিশ্বাসরা। গত বছর মাসিক চুক্তিতে একটি রয়্যাল বেঙ্গল দত্তক নেওয়া হয়েছিল। গত জানুয়ারিতে রয়্যাল বেঙ্গলের দত্তকের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। সম্প্রতি একটি রয়্যাল বেঙ্গলের জন্য নতুন অভিভাবক পাওয়া গিয়েছে। এবার বার্ষিক চুক্তিতে তাকে দত্তক দেওয়া হয়েছে। দত্তক রয়েছে দু’টি ক্যাঙারু মেলোনপান ও পুঙ্গা।
দত্তক নিলে চিড়িয়াখানায় বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয় অভিভাবকদের। অভিভাবক-সহ চারজনের কমপ্লিমেন্টারি পাস দিয়ে থাকে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। চাইলে দত্তক নেওয়া সদস্যদের সঙ্গে জন্মদিন কিংবা বিশেষ দিন উদযাপন করতে পারবেন অভিভাবকরা। যে প্রাণী দত্তক নেওয়া হচ্ছে তার খাঁচার সামনে তার অভিভাবককের নাম দিয়ে একটি বোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়। যিনি দত্তক নিয়ে থাকেন তাঁর হাত একটি সার্টিফিকেট তুলে দেয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।