ত্রাণসামগ্রীতে দুর্নীতি রুখতে দেওয়া হবে বিশ্ববাংলা লোগো, উদ্যোগ রাজ্যের
দুর্গতদের কাছে না পৌঁছে ত্রাণের (Relief) সামগ্রী ঘুরপথে খোলাবাজারে বিক্রি হওয়ার অভিযোগ অনেকবার উঠেছে। ত্রিপল চুরির অভিযোগে এফআইআর (FIR) হয়েছিল বিরোধী দলের এক নেতার বিরুদ্ধেও। এবার তাই ত্রাণ-দুর্নীতি রুখতে অভিনব পন্থা নিচ্ছে রাজ্য। ত্রিপলের মতো ত্রাণ সামগ্রীতে এবার দেওয়া থাকবে বিশ্ববাংলার লোগো (Biswa Bangla Logo)। ফলে ত্রাণের সামগ্রী চুরি করে বিক্রি করতে গেলেই বিপদে পড়বে চোরেরা। সাধারণ মানুষও সতর্ক হয়ে যাবে। বিশ্ববাংলার সরকারি লোগো থাকলে বুঝে যাবে, এই ত্রিপল ত্রাণের সামগ্রী। কেউ আর কিনবে না।
সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। কয়েকমাসের মধ্যেই লোগো দেওয়া ত্রিপল তৈরি হয়ে যাবে। পৌঁছে যাবে রাজ্যের গুদামে। সামনেই ঘূর্ণিঝড়, বর্ষার মরশুম। বন্যাপ্রবণ এলাকা নিয়ে চিন্তার শেষ নেই নবান্নের। প্রস্তুতি তুঙ্গে। দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তরের মন্ত্রী জাভেদ খান (Javed Ahmed Khan) জানিয়েছেন, আয়লা থেকে আমফান, যশ থেকে বুলবুল, সবই তো মে মাসে আছড়ে পড়েছে। তাই দুর্যোগ মোকাবিলার সব সরঞ্জাম তৈরি রাখা হচ্ছে। ত্রিপল-সহ ত্রাণ সামগ্রীও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। মন্ত্রীর দাবি, ত্রাণ সামগ্রী বণ্টন নিয়ে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সেই পথ বন্ধ করতে এবার ত্রিপল-সহ সব ত্রাণ সামগ্রীতে বিশ্ব বাংলার লোগো দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, কাঁথি পুরসভা থেকে ত্রিপল চুরির ঘটনায় বর্তমান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) নাম জড়িয়েছিল। অভিযোগ, তাঁর নির্দেশেই পুরসভার গুদাম থেকে লক্ষাধিক টাকার ত্রিপল সরানো হয়, যাতে সাহায্য করেন পুরসভার দুই কর্মচারী। জাভেদ খানের দাবি, লোগো থাকলে কাঁথি পুরসভার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না। হলেও দোষীরা সহজে ধরা পড়বে। মন্ত্রীর পর্যবেক্ষণ, বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও ত্রাণ সামগ্রী বিলি করে। লোগো দেওয়া থাকলে সরকারি ত্রাণ সামগ্রীকে সেসবের থেকে আলাদা করা যাবে। রঙেও বৈচিত্র আনছে নবান্ন। এতদিন ত্রাণের কাজে শুধু কালো রঙের সরকারি ত্রিপল ব্যবহার হত। এবার কালোর পাশাপাশি নীল ও হলুদ রঙের ত্রিপলও দেওয়া হবে।
নবান্ন সূত্রের খবর, রাজ্যের ১১টি জেলা ঝড়বৃষ্টি হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বন্যাপ্রবণ জেলাগুলোয় স্পিড বোট পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জাভেদ খান জানালেন, আমাদের ২০০ পুরনো স্পিড বোট ছিল। পরে আরও ২০০ বোট কেনা হয়। এই ৪০০ স্পিড বোটকেই ৩০ মে-র মধ্যে বন্যাপ্রবণ জেলাগুলোয় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আগামী ৬ মে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকে বসছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। সেখানেই চূড়ান্ত হবে রূপরেখা।
২০১৯ সালে ন’টি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছে ভারতীয় উপকূলে। পাবুক, ফণী, বায়ু, হিক্কা, কায়ার, মহা, বুলবুল, পবন এবং টিএস ০৭এ বা জেটিডব্লিউসি। ৫০ বছরের ইতিহাসে এটাই সর্বাধিক ঘূর্ণিঝড়। ২০২০ সালে প্রাক-বর্ষায় আমফান এবং নিসর্গ আছড়ে পড়েছিল। বর্ষা পরবর্তী সময়ে আরও তিনটি ঘূর্ণিঝড় হয়। মোট পাঁচটি ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল গত মরশুমে। এবছর ক’টা হয় সেটাই দেখার।