মোদীর সেন্ট্রাল ভিস্তার দৌলতে জীবিকা হারিয়ে হাহুতাশ দিল্লির অসংখ্য হকারের
ঝাঁ-চকচকে সেন্ট্রাল ভিস্তা (Central Vista) হবে। উন্নয়ন। দেশের অগ্রগতি। সব কা বিকাশ। রাষ্ট্রের উন্নতিতে নিজের সম্বলটুকু বিসর্জন দিয়ে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষকে অবদান রাখতেই হবে। এটাই সিস্টেম-এর অলিখিত নিয়ম। সেই নিয়মেই বিকাশ হচ্ছে ঠিক, কিন্তু সব কা? থাকছে প্রশ্ন।
উত্তর খুঁজতে বেশি খাটার দরকার একেবারেই নেই। শুধু সময় বার করে যেতে হবে সেন্ট্রাল ভিস্তা চত্বরে। সেইমতো চলে যাওয়া ইন্ডিয়া গেট। বছর তিনেক আগেও যাঁরা এই তল্লাটে এসেছেন, আজকের দিনে এলে কোনও মিল পাবেন না। ট্যুরিস্ট তাও কয়েকজন পৌঁছতে পারছেন ইন্ডিয়া গেট (India Gate), ন্যাশনাল ওয়ার মিউজিয়াম, কিন্তু নিরাপত্তার বজ্রআঁটুনিতে ফেঁসে আছেন ভেলপুরি, ফুচকা, চা, বেলুন, পকোড়া বিক্রেতা থেকে শুরু করে ফটোগ্রাফার, স্কেচ আর্টিস্টরা।
শুরুটা হয়েছিল করোনার হাত ধরে। এখন গরিব, প্রান্তিক মানুষগুলোর সামনে ঝুলছে রাষ্ট্রের ব্যারিকেড। ইন্ডিয়া গেট চত্বরে চলছে সেন্ট্রাল ভিস্তার কাজ। মাটির নিচে নতুন সংসদ ভবন থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, বাসভবন-সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভবনে যাতায়াতের নিশ্ছিদ্র পথ। তাই সুরক্ষার খাতিরেই ‘নো এন্ট্রি’।
দিল্লিতে এসে ৫০ বছরের বেশি এক চিপস, পপকর্ন বিক্রেতা থেকে শুরু করে যোগী রাজ্যের হিসমপুর জেলার এক ভেলপুরি বিক্রেতা। অথবা বছর বিশেক ইন্ডিয়া গেটের আশপাশে সানগ্লাস বিক্রি করা গাজিয়াবাদের কিষান বা ঠান্ডা জল, কোল্ড ড্রিঙ্ক বিক্রেতা, প্রত্যেকের মুখে শোনা গেল একই ধরনের কথা। কীভাবে সেন্ট্রাল ভিস্তার কারণে তাঁদের পেটে টান পড়েছে, কোনওমতে পরিবার নিয়ে দিন গুজরান করছেন, সেই কথা বলতে বলতে গলা ধরে এল কারও। কেউ বা ইন্ডিয়া গেটের দিকশূন্যপুরে তাকিয়ে চোখ মুছলেন। কেউ বা বাপবাপান্ত করলেন বিজেপির। কেউ আবার প্রার্থনা করলেন দ্রুত সেন্ট্রাল ভিস্তার কাজ শেষ হওয়ার।
প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা হয়েছে, দিল্লিতে তৈরি হচ্ছে সেন্ট্রাল ভিস্তা। বিরোধীরা যার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। বক্তব্য ছিল, আগে করোনার নাগপাশ কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াক দেশ। দেশের অর্থনীতি। তারপর না হয়, এসব হবে। কিন্তু কোথায় কী? কিন্তু এ তো রাজার খেয়াল। রাষ্ট্রের বিকাশের প্রশ্ন। তাই প্রজাদের পেটে এইটুকু টান তো লাগতেই পারে!