গত ১ বছরে আমদানি বেড়েছে চীন থেকে, মোদীর বিদেশি পণ্য বর্জনের ডাক কার্যত ফ্লপ
একবার বঙ্গভঙ্গ। আর একবার অসহযোগ। স্বাধীনতা সংগ্রামের এই দুই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল বিদেশি পণ্য বর্জনের ডাক। কিন্তু সে ছিল পরাধীন ভারতের স্বাধিকার প্রাপ্তির লড়াই। স্বাধীন ভারতের ৭৫তম বর্ষে এসে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীই আবেদন করলেন, বিদেশি পণ্য নির্ভরতা কমাতে হবে। আরও স্বদেশি পণ্য ব্যবহার করতে হবে মানুষকে। স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষে নরেন্দ্র মোদীর স্বদেশি জাগরণ হয়েছে। তাই তিনি স্বদেশি আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। বলেছেন, বিদেশি পণ্যের উপর অতি নির্ভরতা আসলে দাসত্ব। এই দাসত্ব থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে। তাই দেশের জনগণকে তাঁর আবেদন, বেশি বেশি করে স্বদেশি পণ্য ব্যবহার করুন। বিদেশি পণ্য নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসুন। প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার পুনেতে এক বাণিজ্য সম্মেলনে স্বদেশি ব্যবহারের ডাক দিলেও তা কার্যত ফ্লপ। তাঁর সরকারের আমলে পণ্য আমদানি বেড়েই চলেছে। রপ্তানি ও আমদানির মধ্যে পার্থক্য বেশি হলে তাকে বলা হয় বাণিজ্য ঘাটতি, যা অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক।
২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত সরকারি নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, ভারত থেকে অন্য দেশে পণ্য রপ্তানির হার যতটা বেড়েছে, তার তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে আমদানি। বাকি সব দেশকে ছেড়ে দিলেও, সবথেকে বেশি আমদানি বেড়েছে চীন থেকেই। অথচ চীনের লালফৌজ পূর্ব লাদাখে আক্রমণ করায় ভারত সরকার ঘোষণা করেছিল, চীন থেকে পণ্য আমদানি বয়কট করা হবে। ঘোষণা করা হয়েছিল আত্মনির্ভর ভারতের একঝাঁক প্যাকেজও। চীন থেকে ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার কথা ছিল বহু পণ্যের আমদানি। সেই সময়ের স্লোগান ছিল ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’। সেই স্লোগানেরই প্রতিধ্বনি শুক্রবার পুনেতে জৈন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণেও শোনা গেল প্রধানমন্ত্রীর গলায়। তাই এখন স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে বিদেশি পণ্য নির্ভরতা দাসত্ব। সেই দাসত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, একদিকে যেমন রপ্তানি বেড়েছে, তেমনই ঊর্ধ্বমুখী আমদানির হারও। রপ্তানি পেরিয়ে গিয়েছে ৪০ হাজার কোটি ডলার। আমদানিও পেরিয়েছে ৬১ হাজার কোটি ডলার। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল রপ্তানির সাফল্য নিয়ে মোদি সরকারের জয়ধ্বনি দিয়েছেন। কিন্তু আমদানিও যে এই মাত্রায় বেড়েছে সেটাও বাস্তব। শুধু চীনের সঙ্গেই বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৭৭০ কোটি ডলারের। ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের রিপোর্ট অনুযায়ী ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, সার, যন্ত্রাংশ, ওষুধের কাঁচামাল ইত্যাদি ক্ষেত্রে চীন থেকে আমদানির হার এখনও অনেক বেশি। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী স্বদেশিয়ানার দাবি করলেও আত্মনির্ভর ভারতের প্রচার বাস্তবে ব্যর্থ হয়েছে।