রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে নাম প্রস্তাব করবেন, তাকেই সমর্থন, ঘোষনা এসপির
আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরীওয়াল গত সপ্তাহেই তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সর্বসম্মত বিরোধী প্রার্থী নিয়ে আলোচনা করেছেন। আজ এক পা এগিয়ে সমাজবাদী পার্টির পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, এ ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তা চোখ বুজে সমর্থন করবে অখিলেশ যাদবের দল। দলের সহ সভাপতি কিরণময় নন্দ জানান, “আমরা শীঘ্রই এই নিয়ে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে কথা বলব। তবে আমাদের দলের সিদ্ধান্ত, রাষ্ট্রপতি পদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে নাম প্রস্তাব করবেন, আমরা তাকেই সমর্থন করব।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, মমতা চাইছেন না গত বারের মতো (মীরা কুমার) এ বারেও রাষ্ট্রপতি পদে কংগ্রেস মনোনীত কোনও বিরোধী প্রার্থীর নামে ঐকমত্য হোক। আপ, টিআরএস, এসপি, এনসিপি-ও মমতার প্রদর্শিত পথেই হাঁটবেন বলে রাজনৈতিক সূত্রের খবর। কিন্তু যে প্রশ্নটা এ বার সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে, কে হবেন সর্বসম্মত বিরোধী প্রার্থী?
বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের একটি বড় অংশের পক্ষ থেকে শুক্রবার বিকেলে জানানো হয়েছে, এখনও পর্যন্ত এই দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার। অঙ্কের হিসাবে শেষ পর্যন্ত বিজেপির প্রার্থীই এই লড়াইয়ে জিতবে। কিন্তু সূত্রের বক্তব্য, হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি জেনেও, পওয়ারের আপত্তি নেই। পওয়ারের সঙ্গে কিছু বিরোধী নেতার এই বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক এক দফা আলোচনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ বলছে, সমস্ত বিরোধী দলের সমর্থন পাশে পাওয়াটাই এখানে লক্ষ্য, জয়-পরাজয় পরের ব্যাপার। রাষ্ট্রপতি ভোটের মঞ্চে সমস্ত বিরোধী দলের সমর্থন যদি পান পওয়ার, চব্বিশের ভোটে কেন্দ্র-বিরোধী জোটে তাঁর বড় ভূমিকা নিতে সুবিধা হবে।
তবে সেই সঙ্গে এ কথাও রাজনৈতিক সূত্র মনে করিয়ে দিচ্ছে, সামনে এখনও আড়াই মাস বাকি। বিরোধী নেতাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে মাত্র। এর পর সব নেতা বসে কয়েক দফা বৈঠক হওয়া বাকি। উঠে আসতে পারেন অন্য কোনও রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক নাম। তামিলনাড়ুতে ডিএমকে-র জোট শরিক কংগ্রেস। ডিএমকে নেতা এম কে স্ট্যালিনের কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর প্রতি আনুগত্যের ছবি সম্প্রতি দিল্লি দেখেছে। রাজধানীতে ডিএমকে-র নতুন দলীয় কার্যালয় উদ্বোধনে সনিয়াই ছিলেন কত্রীর ভূমিকায়। তবে শরদ পওয়ারকে প্রার্থী করা হলে সুবিধা হল, কংগ্রেস-সহ কোনও বিরোধী দলই তাঁকে খারিজ করতে পারবে না। জানা গিয়েছে, পওয়ারের নামে মমতারও আপত্তি নেই, বরং সমর্থনই রয়েছে।
এসপি নেতা কিরণময় নন্দ আজ একটি প্রশ্নের জবাবে বলেন, “বিভিন্ন দল রয়েছে, বিভিন্ন সমীকরণ রয়েছে। কী হবে তা এখনই বলা চলে না। কিন্তু বিজেপিকে বিপুল ভাবে পরাস্ত করে আসার পর উনিই এখন বিরোধীদের অবিসংবাদী নেত্রী। সর্বভারতীয় কোনও জোট হলে তাঁকেই নেতৃত্বের দায়িত্ব নিতে হবে।” কিরণময়ের বক্তব্য, “কংগ্রেসের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা বলে আর কিছু নেই। একের পর এক রাজ্যে পরাজয়ের পর এটা স্পষ্ট। কংগ্রেস নেতৃত্বে নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়েই জেরবার। তাদের পক্ষে বিরোধী জোট চালনা করা অসম্ভব।”
এসপি নেতা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত বারের উপরাষ্ট্রপতি পদেও যে বিরোধী প্রার্থীর নাম (গোপাল গান্ধী) প্রস্তাব করেছিলেন মমতা, তাকে সমর্থন করেছিল এসপি। তার আগে রাষ্ট্রপতি পদে এ পি জে আব্দুল কালামের নামেও মমতার সঙ্গে সহমত হয়েছিলেন মুলায়ম সিংহ যাদব। কালাম রাজি না-হওয়ায় এবং আরও কিছু রাজনৈতিক কার্যকারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। সে বার রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।