৬ মাস আগে তৈরি হওয়া পতঞ্জলি-ঘনিষ্ঠ কোম্পানিকে জলের দরে বিক্রি পবন হংস, কাঠগড়ায় মোদী সরকার
দেশে চলছে বেচুগিরির সরকার। একের পর এক সংস্থা বিক্রি করে দিচ্ছে বিজেপি সরকার। দেশের বৃহত্তম হেলিকপ্টার পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা পবন হংসের ৫১ শতাংশ শেয়ার স্টার-৯ মোবিলিটি প্রাইভেট লিমিটেডকে মাত্র ২১১ কোটির বিনিময়ে বিক্রি করেছে মোদী সরকার।
প্রসঙ্গত, স্টার-৯ মোবিলিটি কোম্পানিটি মাত্র ৬ মাস আগে ২৯/১০/২১ তারিখে মুম্বইতে নভিভুক্ত হয়েছে। সরকার তার ৫১ শতাংশ শেয়ারের জন্য কমপক্ষে ৫০০ কোটি পাবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু সরকার বেস প্রাইস বা ন্যূনতম মূল্য ধার্য করে মাত্র ২০০ কোটি টাকা। স্টার-৯ মোবিলিটি কোম্পানিটি বেসপ্রাইজের চেয়ে মাত্র ১১ কোটি টাকা বেশি দিয়ে কিনে নেয় পবন হংস।
প্রসঙ্গত, স্টার-৯ মোবিলিটির নিজস্ব মালিকানায় একটিও হেলিকপ্টার নেই। তাদের সহযোগী মহারাজা এভিয়েশনের মোট ৩টি হেলিকপ্টার রয়েছে, যার মধ্যে পতঞ্জলির কর্ণধার রামদেব এবং বালকৃষ্ণ দুটি ব্যবহার করেন। দ্বিতীয় সহযোগী বিগ চার্টারের সঙ্গে লিজের ভাড়া নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে এইজেন এভিয়েশনের মামলা করছে। তৃতীয় সহযোগী অ্যালমাস গ্লোবাসেরও হাতে প্রায় কিছুই নেই। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি হেলিকপ্টার ওড়ানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে পবন হংসের, সেই পবন হংসকেই এখন জলের দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
বর্তমানে সংস্থাটির অধীনে ৪৩টি হেলিকপ্টার রয়েছে, যা দুর্গম এলাকায় যোগাযোগ স্থাপন, অনুুসন্ধান ও উদ্ধারকার্যের জন্য ব্যবহৃত হত। ওএনজিসির অধীনেও সংস্থাটির শেয়ার রয়েছে, অবশিষ্ট ৪৯ শতাংশের শেয়ারহোল্ডার তারা, এছাড়া তারাও অপারেশনের জন্য পবন হংস হেলিকপ্টার ব্যবহার করে। সাধারণের জন্য ফ্লাইট ছাড়াও বিএসএফ-এর ছয়টি ধ্রুব হেলিকপ্টারও হ্যালের জন্য পবন হংস দ্বারা পরিচালিত হয়।
পবন হংসের ১০ লক্ষ ঘন্টার বেশি সময় আকাশে ওড়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এছাড়াও লক্ষাধিক অবতরণ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। পবন হংস ১৯৯২ সাল থেকে বাণিজ্যক লাভ করে চলেছে, ২০১৪-১৫ সালেও সরকারকে ২২৩.৬৯ কোটি টাকার লাভ দিয়েছে, কিন্তু মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এটি ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছিল। ইচ্ছাকৃতভাবেই এটি বিক্রি করার চেষ্টা করা হয়েছিল।
২০১৭ সালে পরিবহন, পর্যটন এবং সংস্কৃতি বিষয়ক সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটির রিপোর্টে পবন হংস বিনিয়োগের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। পবন হংস কর্মচারী ইউনিয়নও সরকারের কাছ থেকে ৫১ সন্তাংশ শেয়ার কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু সরকার তা গ্রহণ করেনি। মাত্র ছয় মাস আগে তৈরি হওয়া একটি কোম্পানির কাছে তা বিক্রি করা হয়েছে।
এত কোম্পানি থাকতে কেন এমন একটি সদ্য তৈরি হওয়া কোম্পানির কাছে এই সংস্থাকেই বিক্রি করল মোদী সরকার? কী রয়েছে এর নেপথ্যে? স্বভাবতই প্রশ্নে উঠছে মোদী সরকারের ভূমিকা নিয়ে, ইচ্ছে করেই কি পবন হংসের মতো সরকারি সংস্থা বিক্রির পথে হাঁটলো দেশের বিজেপি সরকার? সরকারের এহেন ভূমিকায় রাফায়েলের ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছে।