সুন্দরবনজুড়ে চালু হচ্ছে ১০০টি হোম স্টে, অনুমোদন পর্যটন দপ্তরের
হোটেলের সাজানো গোছানো স্বাচ্ছন্দ্য ছেড়ে জঙ্গলের মধ্যে, গ্রাম্য পরিবেশে রাত্রিযাপনের সুযোগ খোঁজেন অনেক পর্যটক। তাছাড়া ‘বাঘের ডেরায়’ নিশিযাপনের সুযোগ থাকলে অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় পর্যটক যে সেই সুযোগ গ্রহণ করবেন, তা হলফ করে বলা যায়। এই চাহিদার কথা মাথায় রেখে এবার সুন্দরবনজুড়ে ১০০টি হোম স্টে চালু করার অনুমোদন দিল পর্যটন দপ্তর। জেলা প্রশাসন সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে। ফলে ‘জলে কুমীর ডাঙায় বাঘ’-এর গহীন অরণ্যে চারপাশ থেকে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, হাজারো নিশাচরের সন্তর্পণে চলাফেরার মাঝে রাত্রিযাপনের রোমহর্কষক অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে পারবেন আপনিও।
এতদিন এই হোম স্টের সুবিধা ছিল কেবলমাত্র ঝড়খালিতে। ২০২০ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ৬০টি বাড়ি বেছে নিয়ে হোম স্টে চালু করা হয়। সেগুলি ইতিমধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে হোম স্টের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঠিক হয়, এবার সুন্দরবনের অন্যান্য প্রান্তেও এই পরিষেবা সহজলভ্য করা হবে। মূলত পাহাড়ে এই হোম স্টে খবুই জনপ্রিয়। পাহাড়ে গেলে অনেক পর্যটকেরই প্রথম পছন্দ হোম স্টে। সেভাবেই সুন্দরবনের মতো জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রেও একই পরিষেবা দিতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। হোম স্টে শুরু করতে বিভিন্ন ব্লকে ইচ্ছুক গ্রামবাসীদের কাছ থেকে প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, শুধু বাসন্তী থেকেই ৯৭টি আবেদন এসেছে। তার মধ্যে ৬৪টিকে বাছাই করা হয়। এছাড়াও গোসাবা, পাথরপ্রতিমা, সাগর ইত্যাদি জায়গা থেকেও আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে।
পর্যটকদের জন্য বাড়িগুলি হোম স্টে হিসেবে সাজিয়ে তুলতে সরকারি সাহায্য করা হবে। বাড়ি পিছু দেড় লক্ষ করে টাকা দেবে রাজ্য। তবে এই টাকা এককালীন দেওয়া হবে না। ধাপে ধাপে কাজ অনুযায়ী টাকা পাবেন বাড়ির মালিক। প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়ার পর জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট বাড়িটি পরিদর্শন করবে। কী কী কাজ হয়েছে, তা যাচাই করা হবে। আধিকারিকরা কাজে সন্তুষ্ট হলে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়া হবে। তার পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা। ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট জমা পড়লেই টাকা ছাড়া হবে।
পর্যটন দপ্তরের কর্তাদের আশা, হোম স্টের মাধ্যমে সুন্দরবনে পর্যটনে জোয়ার আসবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। মানুষের জীবন-জীবিকা উন্নত হবে। করোনা এবং একের পর এক ঘুর্ণিঝড়ে সুন্দরবনের অর্থনীতি কার্যত ভেঙে পড়েছে। হোম স্টে প্রকল্পের হাত ধরে তা গতি পেতে পারে বলে বলে আশাবাদী তাঁরা। আরও জানা গিয়েছে, কোন হোম স্টের কত ভাড়া হবে, তা বাড়ি মালিকরাই ঠিক করতে পারবেন। হোম স্টে পরিচালনার জন্য গৃহকর্তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। উৎকর্ষ বাংলা প্রকল্পের মাধ্যমে তিনদিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তাঁদের। এক আধিকারিকের কথায়, পর্যটকদের আপ্যায়ন, দেখভাল, কথা বলার ধরন, বিভিন্ন আদবকায়দা শেখানো হবে তাঁদের। শীঘ্রই ঝড়খালিতে হবে এই প্রশিক্ষণ শিবির আয়োজিত হতে চলেছে।