কীভাবে কাটাবেন ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি? জেনে নিন
পৃথিবীটা ছোট হতে হতে আজ স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটের হাতে বন্দি। ইন্টারনেটের নেশায় মশগুল গোটা দুনিয়া। আট থেকে আশি সকলেই ভার্চুয়াল মাধ্যমের নেশায় আসক্ত। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই কেটে যাচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা সময়। শিশুরা খেলতে ভুলে গিয়েছে, পড়ুয়ারা পড়া ভুলে সময় কাটাচ্ছে ফোন নিয়ে। যেন ডিজিটাল দুনিয়ায় আটকে গিয়েছে গোটা পৃথিবী।
কীভাবে কাটাবেন ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি:
১) সমস্যাকে চিনুন:
যেকোন সমস্যার সমাধানের আগে, সমস্যাকে শনাক্ত করতে হবে। আপনি যে ফোন, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে বেশি সময় অতিবাহিত করছেন, তা আপনাকেই উপলব্ধি করতে হবে, তবে সমাধানের পথ খোঁজা সম্ভব হবে।
২) কারণ অনুধাবন করুন:
সমস্যার পরেই কারণ খুঁজতে চেষ্টা করতে হবে, কেন আপনি ইন্টারনেটে আসক্ত? আপনি কি একাকীত্বে ভুগছেন? কথা বলার কেউ নেই? তাই কি একাকীত্ব কাটাতে বেছে নিচ্ছেন ইন্টারনেটকে? আর তাতেই হয়ে পড়ছেন আসক্ত! তাই আসক্তির কারণটিকে খুঁজে নিয়ে, জীবন থেকে সমস্যাকে বাপি বাড়ি যা করে দিন।
৩) সমাধান খুঁজুন:
যখন আপনি সমস্যাকে উপলব্ধি করে ফেলেছেন, কারণ জেনে বুঝতে পেরেছেন। তারপরেই খুঁজতে হবে সমাধানের পথ। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৪) ইন্টারনেট ব্যবহারে রাশ টানুন:
স্মার্টফোন, ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা একান্ত প্রয়োজন। আপনাকে নিজেকেই নিজের ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর রাশ টানতে হবে। একটানা দীর্ঘসময় ইন্টারনেট ব্যবহার করার বদলে ছোট ছোট সময়ের ব্যবধানে ফোন বা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন। একনাগাড়ে দীর্ঘক্ষণ ইন্টারনেট ব্যবহার করার থাকলে, মাঝে মাঝে ৩০ মিনিটের জন্য বিরতি নিতে পারেন।
৫) সামাজিক জীবন যাপন করুন:
ভার্চুয়াল জীবন ছেড়ে সামাজিক জীবন যাপন করুন। জীবনকে ভালবাসুন। ভালবাসার মানুষকে অগ্রাধিকার দিন। বন্ধু, প্রিয় মানুষদের সঙ্গে সময় অতিবাহিত করুন। ভার্চুয়াল বন্ধুদের ছেড়ে বাস্তব বন্ধুদের সঙ্গে জীবন কাটান। বাস্তব সম্পর্কগুলোর মূল্য দিন। জীবনের উদযাপন করুন প্রতি মুহূর্তে।
৬) যোগাযোগের মাধ্যম বদলান:
ডিজিটাল মাধ্যমে কথা বলার বদলে ফেস টু ফেস কথোপকথনে জোর দিন। সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে বন্ধু-পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। অনলাইন গেমের বদলে, আউটডোর গেমে অভ্যেস করুন।
৭) রুটিন মেনে চলুন:
দিনের কতক্ষণ সময় আপনি ফোন, ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন, তা নির্ধারণ করে ফেলুন। সময় ম্যানেজমেন্টের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারের সময়ের একটি টাইমটেবিল তৈরি করুন। অল্প কিছু সময় পরপর ফোন দেখার অভ্যেস বদলান।
৮) প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোকে বেছে নিন:
দিনের যে সময়ে ইন্টারনেট বেশি ব্যবহার করতেন, রুটিনে সেই সময়কে নিজের প্রয়োজনীয় কাজগুলোর জন্য বরাদ্দ করুন। জরুরি কাজের মধ্যেই আপনার সময় কেটে যাবে, ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারের আর বেশি সময় পাবেন না।
৯) আপনার ডিভাইসগুলোকে দূরে রাখুন:
যদি সব কিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং দিন দিন ইন্টারনেটের প্রতি আপনার আসক্তি বেড়ে যায়; তাহলে আপনার ডিভাইসগুলো দূরে রাখুন। অবসর সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের ডিভাইসগুলো এমন দূরত্ব রাখুন, যাতে চট করে সেগুলোকে ব্যবহার করা না যায়। বিছানার পাশে ল্যাপটপ, স্মার্টফোন রাখবেন না। ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফোন দেখার অভ্যেস ত্যাগ করুন।
১০) অফলাইন কাজকর্মে মনোনিবেশ করুন:
যে কাজগুলো ইন্টারনেট ছাড়াই করা সম্ভব, সেগুলোতে মনোনিবেশ করুন। খেলায় অংশগ্রহণ করুন, স্বেচ্ছাসেবি নানান কাজে অংশগ্রহণ করুন, বিভিন্ন সিভিক গ্ৰুপ, কমিউনিটির সঙ্গে সময় কাটান। অনলাইন ছেড়ে বেছে নিন অফলাইন জীবন।