শুধু চিদম্বরম নন, জীবনের ময়দানে তাড়া খেয়েছেন একাধিক রাজনীতিবিদ
কলকাতায় মামলা লড়তে এসে এক মহিলা আইনজীবীর তাড়া খেলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা প্রবীণ আইনজীবী পি চিদম্বরম। তাঁরই দলের সাংসদ অধীর চৌধুরীর করা একটি মামলায় তিনি অধীরের বিরোধী পক্ষের আইনজীবী। কলকাতা হাইকোর্টে কংগ্রেসের আইনজীবী সেলের সদস্যরা তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁর বিরুদ্ধে ‘মমতার দালাল’ বলে স্লোগান ওঠে। এক মহিলা আইনজীবী নিজের কোট খুলে ফেলে চিদম্বরমের দিকে তেড়ে যান।
রাজনীতির সঙ্গে তাড়া খাওয়ার এক নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। বাংলাই হোক বা রাজ্য পেরিয়ে দেশ, এমন কি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও রাজনীতিকদের ভুরিভুরি তাড়া খাওয়ার নজির রয়েছে।
জীবনের ময়দানে তাড়া খেয়েছেন একাধিক রাজনীতিকেরা, জেনে নিন কারা তাঁরা:
বিদেশ
১) জর্জ বুশ:
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন জর্জ বুশ তাঁর দিকে ধেয়ে আসা জুতোকে পাশ কাটিয়েছিলেন।
২) ইম্যানুয়েল মাক্রোঁ:
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাক্রোঁ-র সঙ্গে হাত মেলানোর ছলে তাঁকে সজোরে থাপ্পড় মেরেছিলেন এক ব্যক্তি।
দেশ
ভারতেও বহুবার এ ধরনের হামলা হয়েছে। এমনই অতর্কিত আক্রমণের শিকার হয়েছেন রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
১) অরবিন্দ কেজরিওয়াল:
অরবিন্দকে লক্ষ্য করে কালি ছিটিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। দিল্লির রাস্তায় জোড়-বিজোড় গাড়ির সিদ্ধান্তের সময় তাঁকে লক্ষ্য করে জুতোও ছোড়া হয়।
২) রাহুল গান্ধী:
উত্তরপ্রদেশে কৃষকদের জন্য আয়োজিত এক জনসভায় রাহুলের দিকে জুতো ছোড়া হয়েছিল।
বাংলা
আমাদের রাজ্যও ব্যাতিক্রম নয়! এমন ঘটনার বেশ কিছু উদাহরণ রয়েছে এ রাজ্যে।
১) মানস ভুইয়াঁ:
২০০৯ সালের ঘটনা। সিপিএমের তাড়া খেয়ে বর্ধমানের মঙ্গলকোটে মাঠ পেরিয়ে দৌড়তে হয়েছিল মানস ভুইয়াঁকে। মঙ্গলকোটে এক সিপিএম নেতা খুনের পর বহু ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৎকালীন শাসকদল সিপিএমের বিরুদ্ধে। মানস তখন কংগ্রেসের বিধায়ক। তিনি অন্যান্য কংগ্রেস নেতাদের নিয়ে ঘটনাস্থল সরেজমিনে দেখতে যান। কিন্তু ঘটনাস্থলের তাঁদের অনেক আগেই আটকে দেওয়া হয়। তাড়া করা হয়। আহতও হয়েছিলেন মানসসহ তিনজন।
২) প্রণব মুখোপাধ্যায়:
২০০৫ সালের ১৫ মে কলকাতায় কংগ্রেসেরই প্রদেশ দপ্তর বিধান ভবনে হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। কলকাতা পুরভোটের প্রার্থী বাছাইকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভে নেমেছিলেন কংগ্রেসের একদল কর্মী-সমর্থকেরা। প্রণব মুখোপাধ্যায় বিধান ভবনে ঢোকার সময় তাঁকে নিগৃহীত হতে হয়েছিল।
৩) দিলীপ ঘোষ:
দিলীপ ঘোষকেও একাধিকবার হেনস্থার মুখ পড়তে হয়েছে। ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর, তখন তিনি বিজেপির রাজ্য সভাপতি। দার্জিলিঙে দিলীপের মাইক কেড়ে নেওয়া হয়। থানায় অভিযোগ জানাতে যাওয়ার পথেও ধাক্কাধাক্কি করা হয়। দিলীপের আপ্তসহায়ক দেব সাহা এবং দার্জিলিঙের বিজেপি নেতা রাকেশ পোখরেলকে রাস্তায় ফেলে মারধরও করা হয়েছিল সে’সময়।
৪) জয়প্রকাশ মজুমদার:
হেনস্তার শিকার হয়েছেন জয়প্রকাশ মজুমদারও, ২০১৯ সালে তিনি তখন বিজেপিতে। তখন নদিয়ায় ভোটের দিন হেনস্তার মুখে পড়েন তিনি। জয়প্রকাশ তখন করিমপুরের বিধানসভা উপনির্বাচনের বিজেপি প্রার্থী। টিভিতে দেখানো ভিডিওতে ফুটেজে দেখা গিয়েছিল, তাঁকে মাটিতে ফেলে পদাঘাত করছেন কয়েকজন।
৫) সুজাতা খাঁ:
গত বিধানসভা নির্বাচনে হুগলির আরামবাগ আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন সুজাতা খাঁ। ৬ই এপ্রিল ভোট চলার সময় আরান্ডির মহল্লাপাড়া এলাকায় একটি বুথ থেকে গন্ডগোলের অভিযোগ পেয়ে সেখানে যান সুজাতা। তখনই তাঁকে তাড়া করে একদল লোক। তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, বিজেপি কর্মী-সমর্থকরাই এই হামলা চালিয়েছিল।