‘বিদেশি’ তকমা নিয়েই আত্মহত্যা করেছিল ছেলে, ২২ বছর পর নাগরিকত্বের লড়াইয়ে জয় মায়ের
একই ট্রাইব্যুনাল, পৃথক নির্দেশ! সময়ের ব্যবধান বলতে ২২ বছর। আইনি লড়াইয়ের দীর্ঘ পথ। নাগরিকত্ব প্রমাণে শেষ পর্যন্ত জিতলেন আকোলরানি নমশূদ্র। বুধবার থেকে ভারতের বৈধ নাগরিকও হলেন তিনি। অথচ, বিজয়িনীর হাসি নেই তাঁর মুখে। বরং রায় শুনে কান্নায় ভেঙে পড়লেন আকোলরানি। বুকে ধরা একমাত্র সন্তান অর্জুনের ছবি। নিজেদের ভারতীয় নাগরিক প্রমাণের লড়াইয়ে নেমেছিলেন অর্জুন। করেছিলেন অনেক ছোটাছুটি। সচিত্র ভোটার পরিচয় পত্র, আধার কার্ড সহ যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ পেশ করেছিলেন ফরেন ট্রাইব্যুনালে। লাভের লাভ কিছু হয়নি। ২০১২ সালে তাঁকে বিদেশি নাগরিক ঘোষণা করা হয়। আর এই ‘দাগানো’ মানেই ঠিকানা ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’। অবসাদে আত্মহত্যা করেন অর্জুন। তখন অসমে আজকের বিজেপির অন্য মুখ। অর্জুনের মৃত্যু হয়ে ওঠে তাদের রাজনীতির মোক্ষম অস্ত্র। দু’বছর পর লোকসভার ভোট। ততদিন পর্যন্ত ইস্যুটিকে নানা কর্মসূচির মধ্যে জিইয়ে রাখেন দলের নেতা-কর্মীরা। ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। অসমের কাছাড়ে জনসভা করতে এলেন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদি। সেদিন তাঁর বক্তব্যের বড় অংশজুড়ে জায়গা করে নিল অর্জুনের মৃত্যু। তিনি বলেছিলেন, ‘অর্জুন নিজের জন্য মরেনি। ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে থাকা লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য তিনি মরেছেন। তাঁর এই আত্মত্যাগ আমরা ভুলব না।’ মোদির সভা শেষ হতেই রীতিমতো মিছিল করে আকোলরানির বাড়িতে পৌঁছন নেতা-কর্মীরা। তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, ‘আপনি লড়াই চালিয়ে চান। আপনার পাশে আমরা রয়েছি।’
এর পরের ঘটনা সবারই জানা। লোকসভা ভোটে বিজেপিকে ডিভিডেন্ড দিল তাদের ডিটেনশন বিরোধী আন্দোলন। অসমের ভোটেও ক্ষমতায় এল গেরুয়া শিবির। এসেই ভোল পাল্টে নাগরিকপঞ্জি কার্যকর করতে উঠে পড়ে লাগল ‘ডবল ইঞ্জিন’-এর সরকার। ততদিনে বিজেপির কাছে বিস্মৃত হয়ে গিয়েছে অর্জুনের মৃত্যু। কিন্তু লড়াই ছাড়েননি আকোলরানি। ছেলেকে হারানোর ১০ বছর পর জয় পেলেন তিনি। এদিন তাঁকে ভারতীয় নাগরিক বলে স্বীকৃতি দিল শিলচরের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল। তবে আশ্চর্যজনক ঘটনা, ২০১২ সালে যে সকল তথ্যপ্রমাণ দেখে অর্জুনকে ‘বিদেশি নাগরিক’ বলা হয়েছিল, ওই একই তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আকোলরানিকে ভারতীয় নাগরিক বলে ঘোষণা করল ট্রাইব্যুনাল। আদেশনামায় চার নম্বর ট্রাইব্যুনালের সদস্য ধর্মেন্দ্র দেব বলেছেন, ‘আকোলরানি যেসব তথ্যপ্রমাণ দাখিল করেছেন সেগুলি বৈধ ও বিশ্বাসযোগ্য। ১৯৬৬ সালে ১ জানুয়ারি থেকে তিনি অসমের মাটিতেই বসবাস করছেন। তাই তিনি কোনওভাবেই বিদেশি নাগরিক নন। আকোলরানি একজন ভারতীয় নাগরিক।’
আকোলরানির নাগরিকত্ব নিয়ে প্রথম প্রশ্ন তুলেছিল অসম সীমান্ত পুলিস। সেটা প্রায় ২২ বছর আগে। এদিন ভারতীয় নাগরিকত্বের স্বীকৃতি পেয়ে আকোলরানির আক্ষেপ—‘১০ বছর আগে ট্রাইব্যুনাল যদি এই সিদ্ধান্ত নিত, তা হলে আমার অর্জুনকে হারাতে হতো না।’