মোদীর রাজত্বে তলানিতে গম উৎপাদন, বাধ্য হয়ে বিদেশে রপ্তানি বন্ধ করল কেন্দ্র
ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের আবহে দাম বাড়ছে গম এবং আটার। গম রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল ভারত সরকার। জানা গেছে, অবিলম্বেই গম রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
মার্চের মাঝামাঝি সময়ে ভারতে গমের উৎপাদন কমতে থাকে। কৃষি মন্ত্রক এবং খাদ্য মন্ত্রকের আশঙ্কা, উৎপাদন কমবে প্রায় ৬০ লক্ষ টন। পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ মার্চ মাস থেকেই তাপপ্রবাহে জ্বলছে। ফলে মার খেয়েছে ফলন। এদিকে,পঞ্জাব, হরিয়ানার কৃষকেরা আবার গমের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। লাভবান হচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা।
গমের সংকট থাকা সত্ত্বেও গম উৎপদন করে লাভের মুখ দেখচ্ছেন না কৃষকেরা, কারণ ১) কৃষিক্ষেত্রের অভাব। (খুব অল্প চাষের জমি রয়েছে কৃষকদের হাতে) ২) শস্য মজুত করে রাখার জন্য গুদামের অভাব ৩) কৃষকদের রুগ্ন অর্থনৈতিক অবস্থা। এদিকে গমজাত খাবার, যেমন পাউরুটির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, মার্চে মুদ্রাস্ফীতি পৌঁছেছে ৮.৩৯ শতাংশ। আটার দাম বাড়ায় বেকারি শিল্পও ক্ষতির সম্নুখীন হয়েছে। প্যাকেটজাত বেকারি পণ্যের দাম বাড়ছে। বোঝা চাপছে সাধারণ দেশবাসীর উপর।
জানা যাচ্ছে, গমের আটার দাম ৩২.৭৮ টাকা প্রতি কেজি (৭ই মে শনিবার, ২০২২ তারিখের বাজার দর অনুযায়ী) যা গত বছরের তুলনায় ৯.১৫ শতাংশ বেশি। দেশের খুচরো বাজারে সর্বোচ্চ আটার দাম মুম্বাইতে, ৪৯ টাকা প্রতি কেজি। এরপরেই চেন্নাই ৩৪ টাকা প্রতি কেজি। কলকাতা ও দিল্লিতে খুচরো বাজারে আটার দাম যথাক্রমে ২৯ টাকা প্রতি কেজি ও ২৭ টাকা প্রতি কেজি।
খাদ্য মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, চলতি রবি মরশুমে ১৯৫ লক্ষ টন গম কিনেছে মোদী সরকার, যা সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্যের তুলনায় অনেকটাই কম, মোদী সরকার ৪৪৪ লক্ষ টন গম কেনার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল। গত বছর ৪৩৩ লক্ষ টন গম কেনা হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর বিগত বছরের অর্ধেকেরও কম পরিমাণ গম কিনেছে মোদী সরকার। প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনার আওতায় গমের জন্য বরাদ্দের কমিয়েছে মোদী সরকার। (তথ্যসূত্র: ক্রেতা সুরক্ষ মন্ত্রক, খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রক, ভারত সরকার)
তথ্য বলছে, এশিয়া তথা বিশ্বে অন্যতম গম উৎপাদনকারী দেশ ভারত। সম্প্রতি আফগানিস্তানে বিশাল পরিমাণ গম রপ্তানি করেছে ভারত। শুধু ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে ৭০ লক্ষ টন গম উৎপাদন করেছে ভারত।
ইউক্রেন বিভিন্ন দেশে প্রচুর পরিমাণে গম সরবরাহ করে। সেই সরবরাহ বাধা পেতেই বিশ্বব্যাপী ক্রেতারা গম পেতে ভারতের দিকে ঝুঁকছিল। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের পর থেকেই বিশ্বে কমেছে গম রপ্তানি। বিশ্ব যখন গমের সঙ্কটে ভুগছে, তখন সেই শূন্য়স্থান পূরণ করতে চেয়েছিল ভারত। তবে এরই মাঝে দেশে তলানিতে গিয়ে ঠেকে গম উৎপাদন। ফলে দেশেও কিছুটা সংকট তৈরি হয়। কারণ রপ্তানিতেই প্রচুর গম বাইরে চলে যাচ্ছিল। ফলে দেশের বাজারে বেড়ে গিয়েছে গমের দাম।
রাজনৈতিক বিশষজ্ঞরা বলছেন, গম কূটনীতির মাধ্যমে মোদী সরকারের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি তৈরি হত ঠিকই। কিন্তু এর বড় মূল্য চোকাতে হবে দেশবাসীকে। যেহেতু দেশের উৎপাদিত গমের অর্ধেকটাই কিনছে বেসরকারি সংস্থা, এবং তারা বিশ্ব বাজারে এই সংকটের সময় শস্য ধরে রেখে পরে দাম বহুগুণে বাড়িয়ে মুনাফা করতে চাইবে। ফলে দেশে কৃত্রিম সংকট তৈরি হবে, গমজাত পণ্যের দামও বাড়বে। তাই রপ্তানিতে লাগাম টানল কেন্দ্রীয় সরকার।