আবাস যোজনার নাম বদলেছে বিজেপি শাষিত একাধিক রাজ্য, কেন্দ্রের রোষানলে শুধুই বাংলা ও ছত্তিশগড়!
রাজ্যের সাধারণ মানুষের সঙ্গে গোটা প্রকল্পটিকে ‘সম্পৃক্ত’ করাই ছিল লক্ষ্য। তাই আবাস যোজনায় ‘বাংলা’ নামটি জুড়েছিল নবান্ন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা পেয়েছিল নতুন পরিচয়—বাংলা আবাস যোজনা। আর ঠিক সেই কারণেই কেন্দ্রের গেরুয়া সরকারের ‘রোষানলে’ পড়েছে রাজ্য।
গ্রামীণ আবাস যোজনায় গৃহ নির্মাণে গোটা দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানে থাকা সত্ত্বেও চলতি আর্থিক বছরে (২০২২-’২৩) পশ্চিমবঙ্গের জন্য কোনও লক্ষ্যমাত্রা এবং অর্থ বরাদ্দ করেনি গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। অথচ একাধিক ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্য বেশ কয়েক বছর ধরেই এই প্রকল্পের নাম নিজেদের মতো পাল্টে দিব্যি কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তালিকায় গেরুয়াকুলের গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, বিহার তো বটেই, এমনকী বিরোধী শাসিত অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থান ও দিল্লি পর্যন্ত রয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে কেন্দ্র বরাদ্দ বন্ধ করেনি। বঞ্চনার কোপ পড়েছে শুধু বাংলা এবং ছত্তিশগড়ে। এই দুই রাজ্যে বহু চেষ্টাতেও সরকার গড়তে ব্যর্থ বিজেপি। আর তাই মোদি সরকারের এই দ্বিচারিতা প্রকাশ্যে আসায় শুরু হয়েছে সমালোচনা।
নাম বদলানোর এই প্রবণতা অবশ্য শুরু হয়েছে কেন্দ্রের দিক থেকেই। ১৯৮৫ সালে শুরু হওয়া ‘ইন্দিরা আবাস যোজনা’ ২০১৫’এ পাল্টে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ করেছিল মোদি সরকারই। তা নিয়ে অবশ্য কোনও আপত্তি ওঠেনি। এখন সেই নাম বদলকেই বরাদ্দ বন্ধে অজুহাত দেওয়া হচ্ছে। গ্রামীণ আবাস যোজনায় বাংলার উজ্জ্বল অবস্থান সত্ত্বেও কেন্দ্রের এই অবস্থান যে বঞ্চনাকেই প্রতিষ্ঠিত করেছে, সেকথা বারবার বলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আঞ্চলিক ভাষা আর সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিতেই যে প্রকল্পের নামে বাংলা শব্দটি জোড়া হয়েছে, সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।
এই বঞ্চনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছেন তিনি। ১০০ দিনের কাজের বকেয়া মজুরির সঙ্গেই আবাস যোজনা প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও অর্থ বরাদ্দের অনুরোধ জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘২০১৬-১৭ আর্থিক বছর থেকে আবাস প্রকল্পে দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানে থেকে ৩২ লাখেরও বেশি গৃহনির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে। এই সাফল্য সত্ত্বেও নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে না। দুর্ভোগে পড়েছেন আবাস প্রকল্পের অপেক্ষায় থাকা উপভোক্তারা।’
গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ডবল ইঞ্জিনের রাজ্য উত্তরপ্রদেশে এই প্রকল্পের নাম ‘মুখ্যমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনা’। এমনকী স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী কেন্দ্রে এটি ‘বারাণসী মুখ্যমন্ত্রী আবাস যোজনা’ হিসেবে পরিচিত। একইভাবে মধ্যপ্রদেশ ও বিহারে গ্রামীণ আবাস যোজনার আগে প্রধানমন্ত্রীর বদলে বসানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী শব্দটি। মোদি-শাহের রাজ্যে এই প্রকল্পের নাম ২০১৪ সাল থেকেই ‘মুখ্যমন্ত্রী গুজরাত রুরাল-আরবান হাউজিং যোজনা’। বিজেপি শাসিত কর্ণাটকে আবার এর নতুন পরিচয় হয়েছে ‘বাসব বসতি যোজনা’। অথচ এ রাজ্যে ‘বাংলা’ নামটি জোড়ায় কেন এত আপত্তি আর বঞ্চনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্ট সব মহল।
রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গের প্রারম্ভিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ লক্ষ ৭৯ হাজার ৪৫৭। এর মধ্যে ৩৪ লক্ষ ৬৭ হাজার ৬৩৬টি গৃহ অনুমোদিত হয়েছে। নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে ৩২ লক্ষ ৫২ হাজার ৪৬৯টির। চলতি আর্থিক বছরে নির্মাণ লক্ষ্যমাত্রা প্রদানের জন্য গত ৮ এপ্রিল কেন্দ্রের কাছে লিখিত প্রস্তাব পাঠানো হয়। এদিন পর্যন্ত তার অনুমোদন দেয়নি কেন্দ্র।এই মুহূর্তে