অনুরাগকে মুখ্যমন্ত্রী করা হোক, ত্রিপুরার পর হিমাচল প্রদেশেও বিদ্রোহ গেরুয়া শিবিরে
বিজেপি শাসিত আরও এক রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বদলের সম্ভাবনা। এবার হিমাচল প্রদেশ! ত্রিপুরার নাটকের পুনরাবৃত্তি কি হবে সেখানে? জল্পনা কমছে না। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুর সম্প্রতি ধোঁয়াশা কাটাতে স্পষ্ট বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী পদে আমিই থাকছি। নেতৃত্বে বদল হচ্ছে না।’ কিন্তু তাঁর এই ঘোষণাতেও থামছে না গুঞ্জন আর চাপানউতোর। বরং হিমাচল প্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী বদলের চর্চা আরও জোরদার হচ্ছে। সূত্রের খবর, রাজ্যে রাজ্যে বিজেপির অন্দরের গোষ্ঠী কোন্দল চরম আকার ধারণ করছে। ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে, রাজ্যস্তরে নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহদের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব আর নেই। যখন তখন যে কোনও রাজ্যেই বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিচ্ছে। আর সেই বিক্ষোভ সামলাতে দিশাহারা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এই আবহে নবতম সংযোজন হিমাচল প্রদেশ। সে রাজ্যে বিজেপির অন্দরে একাংশ দাবি তুলেছে, অনুরাগ ঠাকুরকে করা হোক মুখ্যমন্ত্রী। তাহলে আসন্ন ভোটে দলের শক্তি বাড়বে।
ইতিমধ্যেই হিমাচলে জোরদার প্রচার আর সভা-সমাবেশের মাধ্যমে আসরে নেমে পড়েছে নতুন রাজনৈতিক শক্তি আম আদমি পার্টি। সবথেকে বিপজ্জনক বার্তা হল, বিজেপি থেকে দলে দলে নেতাকর্মী যোগ দিচ্ছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দলে। আর ঠিক এই পরিস্থিতিতে দিল্লির উপ মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিশোদিয়া গেরুয়া শিবিরকে আরও অস্বস্তিতে ফেলে হঠাৎ বলেছেন, ‘বিজেপির অন্দরের সূত্রেই আমরা জানতে পারছি হিমাচল প্রদেশেও মুখ্যমন্ত্রী পরিবর্তন করা হবে। জয়রাম ঠাকুরের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরকে বসানো হবে রাজ্যের গদিতে। জয়রাম ঠাকুরের উপর আর আস্থা নেই জনতার। সেটা বুঝতে পেরে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বও এবার তৈরি হচ্ছে তাঁকে সরিয়ে দিতে। অতএব ত্রিপুরার পর হিমাচলে মুখ্যমন্ত্রী বদল সময়ের অপেক্ষা।’ সিশোদিয়ার এই মন্তব্য কার্যত রাজনৈতিক কৌশল হলেও আপাতদৃষ্টিতে তাতে সারবত্তা আছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, সত্যিই গত বছর থেকে হিমাচলে বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল চরমে।
যদিও মণীশ সিশোদিয়ার এই বিবৃতিকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন আখ্যা দিয়ে বিজেপি প্রাণপণে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ড্যামেজ কন্ট্রোলে। কিন্তু দলের অন্দরের ঝগড়া যে এখন সবথেকে বড় সঙ্কট, সেটা বুঝতে কারও অসুবিধা হচ্ছে না। মধ্যস্থতার জন্য যুযুধান একাধিক শিবিরকে নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছে শীর্ষ নেতৃত্ব। বিজেপি সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডা সম্প্রতি চারদিন ধরে হিমাচল প্রদেশে দলের বিধায়ক, সাংগঠনিক নেতা, জেলাস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোটে লড়াই করে আবার দলকে জেতাতে হবে, এই বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি তিনি সকলকে অনুরোধ করেছেন, ‘কোনও দাবিদাওয়া থাকলেও সর্বাগ্রে শীর্ষ নেতৃত্বকে জানান। বিদ্রোহ করলে দলের ক্ষতি।’ কিন্তু বিদ্রোহ কমছে না। অন্দরের খবর, জয়রাম ঠাকুরের নেতৃত্বে ভোটের ময়দানে নামতে চাইছে না বিজেপির একাংশ। তাঁদের দাবি, অনুরাগ ঠাকুরকেই মুখ্যমন্ত্রী করা হোক। একান্তই সেটা সম্ভব না হলে অনুরাগ ঠাকুরকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করেই যেন ভোটের ময়দানে প্রচারে নামা হয়।
হিমাচলে সাম্প্রতিক একের পর এক নির্বাচনে ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। পুরসভা থেকে লোকসভার উপনির্বাচনে অপ্রত্যাশিতভাবে পরাস্ত হয়েছে বিজেপি। নভেম্বর মাসে মান্ডি লোকসভা আসনের উপনির্বাচনে তাদের হারিয়ে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস। হিমাচল নিয়ে বিজেপির আতঙ্কের প্রধান কারণ, এটাই দলের সভাপতি নাড্ডার রাজ্য। সুতরাং একে নিজের রাজ্যের দলীয় ঝগড়া সামলাতে তিনি নাজেহাল এবং এরপর দল যদি খারাপ ফল করে, তাহলে তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। নাড্ডা বনাম অনুরাগ অনুগামীরা স্পষ্টই দুই শিবিরে বিভক্ত। ২০২১ সালের রদবদলে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী পদে অনুরাগকে নিয়ে এসে নরেন্দ্র মোদি সাফ বুঝিয়েছেন যে, তিনি এখন দলে নতুন নক্ষত্র। ফলে জয়রামের চাপ বাড়ছেই।