নেতাজিকে জাঙ্ক আখ্যা মোদীর আমলার, ক্ষুব্ধ বসুপরিবার চিঠি দিল প্রধানমন্ত্রীকে
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলা ও বাঙালির হৃদয় ছুঁতে চেয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর দল। বাঙালিকে আবেগের বাড়ি খাওয়ানোর জন্য মোদী সরকার বেছে নিয়েছিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে। সেই সময় বিস্তর প্রতিশ্রুতি দিয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে সম্মান দেখানোর একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বিজেপি সরকারের তরফে। এখন সুভাষচন্দ্র কেন্দ্রের বিজেপি প্রশাসনের ভাষায় ‘জাঙ্ক’ বা আবর্জনার বিষয়! নেতাজি সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরই দিচ্ছে না মোদী সরকার।
সম্প্রতি কেন্দ্রের এক আমলার থেকে এমনই জবাব পেয়েছেন নেতাজির পরিবারের এক সদস্য। যথারীতি চটেছেন সুভাষচন্দ্রের প্রপৌত্রী রাজ্যশ্রী চৌধুরী, এ ব্যাপারে তিনি হেস্তনেস্ত চান। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, সাতদিনের মধ্যে ওই আধিকারিককে সাসপেন্ড ও গ্রেপ্তার করতে হবে। অন্যথায় এই বিষয়ে তিনি আইনের দ্বারস্থ হবেন।
আইএনএ-র প্রধান হিসেবে ১৯৪৩ সালে সিঙ্গাপুরে প্রতিষ্ঠিত আজাদ হিন্দ সরকার তথা অখণ্ড ভারতের প্রথম সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান পদে নিজেকে ঘোষণা করেছিলেন সুভাষচন্দ্র। সেই সময় তাঁকে কুর্নিশ জানিয়ে স্বীকৃতি দিয়েছিল বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলি। সুভাষের নেতৃত্বাধীন সেই সরকারকে কূটনৈতিক স্বীকৃতিও দিয়েছিল একাধিক দেশ। ২০১৮ সালে আইএনএ’র ৭৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে একাধিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে মোদী সরকার। ওই বছর ২১ অক্টোবর আইএনএ দিবসে লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে নেতাজিকে অখণ্ড ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেন মোদী।
এখন রাজ্যশ্রীদেবী চান, দিল্লির ঐতিহাসিক তিনমূর্তিভবন প্রাঙ্গণে ২৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে ওঠা ‘প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়ে’ স্থান পান নেতাজি। সুভাষচন্দ্রের নানা ধরনের ছবি, ভিডিও ও অডিও ক্লিপিংসের পাশাপাশি দেশনায়কের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস স্থান পাক সেখানে। এই মর্মে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সেই চিঠির জবাব দেওয়ার জন্য সংগ্রহালয়ের দায়িত্বে থাকা নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর রবি কে মিশ্র রাজ্যশ্রীদেবীর প্রশ্নের জবাবে নেতাজি সংক্রান্ত এই বিষয়কে ‘জাঙ্ক’ বলে ব্যাখ্যা করেন। পাশাপাশি এই ধরনের ‘জাঙ্ক’ বিষয়ে জবাব দেওয়া প্রয়োজন নয় বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় রবি মিশ্রর এই জবাবকে উপযুক্ত বলে মনে করে রাজ্যশ্রীদেবীকে জানিয়ে দেয়।
মোদী সরকারের এহেন আচরণে বসু পরিবারের অনেক সদস্য রীতিমতো ক্ষুব্ধ। সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই ঘটনায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। গত সোমবার ১৬ মে প্রধানমন্ত্রীকে এব্যাপারে কড়া চিঠি লেখেন রাজ্যশ্রীদেবী। ওই আধিকারিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও তুলেছেন তিনি। এর অন্যথায় মামলা করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন রাজ্যশ্রীদেবী। কার্যত দেশনায়ক সুভাষচন্দ্রকে অপমান করছে বিজেপি। বিজেপির আচরণে স্পষ্ট, আদপে দেশনায়ককে সম্মান জানানো নয়, ভোটের জন্যই বাঙালির নেতাজি আবেগকে ব্যবহার করেছে বিজেপি। ভোট মিটটেই অপাঙ্ক্তেয় হয়ে পড়েছেন তিনি।