দেড়দশকে সাতগুণ সম্পত্তি বৃদ্ধি! দলীয় বিধায়কের বিরুদ্ধে সরব বিজেপি কর্মীরাই
বিনা পরীক্ষায় কল্যাণী এইমসে পুত্রবধূ অনসূয়া ঘোষ ধরকে চাকরি পাইয়ে দিয়ে আকুল পাথারে পড়েছেন চাকদহের বিজেপি বিধায়ক বঙ্কিমচন্দ্র ঘোষ। দুর্নীতির অভিযোগে ইতিমধ্যে টালমাটাল তার অবস্থা। এবার গোদের উপর বিষফোঁড়া তার সম্পত্তি বৃদ্ধি। যা নিয়ে রীতিমতো বেকায়দায় বাম আমলের প্রাক্তন মন্ত্রী। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামার তথ্যের ভিত্তিতে দলীয় বিধায়কের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিজেপির নিচুতলার কর্মীরাই। তাদের অভিযোগ, বাম থেকে রামের যাত্রায় শেষ ১৫ বছরে বঙ্কিমবাবুর সম্পত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে ৭ গুণ। তিনি এখন কোটিপতি।
২০০১ ও ২০০৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে হরিণঘাটা কেন্দ্র থেকে সিপিএমের টিকিটের লড়ে বিধায়ক হয়েছিলেন বঙ্কিমবাবু। ২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তিনি। সিপিএমে থাকাকালীন তিনি ছিলেন দলের সর্বক্ষণের কর্মী, অর্থাৎ নির্দিষ্ট কোন পেশা বলতে কিছুই ছিল না। গত লোকসভা নির্বাচনের সময় দল পাল্টে বিজেপিতে যোগ দেন। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে চাকদহ কেন্দ্র থেকে জয়ী হন।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৬ সালে বঙ্কিমবাবুর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল১৩ লক্ষ ৭২ হাজার ৭৭৭ টাকা। সোনার গয়না ছিল পাঁচ ভরি। এছাড়া হালিশহরে প্রায় এক কাটা জমি ও দীঘায় তিনটি জমি। বাম শিবির ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখানোর পরেই বৃদ্ধি পেতে শুরু করে বঙ্কিমবাবুর সম্পত্তি। ২০২১ সালে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় নির্বাচন কমিশনে তারই জমা দেওয়া হলফনামা অনুসারে, তার সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪৫৬টাকা। বেড়েছে সোনার পরিমাণও। এছাড়া দুটি কৃষি জমি, হালিশহরে দুটি চাষযোগ্য জমি, দীঘায় একটি ব্যবসায়িক ও একটি বসবাসকারী ভবন, কলকাতার মানিকতলায় একটি বহুতলের ফ্ল্যাটও স্থাবর সম্পত্তির তালিকা যুক্ত হয়েছে।
ফুলে ফেঁপে উঠেছেন প্রাক্তন বাম মন্ত্রী তথা আধুনা চাকদহের বিজেপি বিধায়ক। সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনে তিনি যদি এমন হলফনামা দিয়ে থাকেন এবং তার যদি প্রমাণ মেলে, তাহলে তিনি পদ ছেড়ে দেবেন। তিনিও জানা দীঘা বিধায়কের কোনও সম্পত্তি নেই। যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারেন, তাহলে তাঁকেই ওই সম্পত্তি লিখে দেবেন বলেও চ্যালেঞ্জ করেছেন বিজেপি বিধায়ক।
দলীয় বিধায়কের স্ত্রী ও পুত্রের চাকরি পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির নিচুতলার কর্মীরাই। জানা গিয়েছে, ২০০১ সালে মৌলানা আবুল কালাম ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে কাজে যোগ দেন বঙ্কিমবাবুর স্ত্রী। আর কয়েক বছর আগে কল্যাণীর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চে চাকরি পেয়েছেন বিধায়কের পুত্র সৌভিক ঘোষ। এনিয়ে বিধায়কের বক্তব্য তার স্ত্রী ও পুত্র বহু বছর ধরেই কাজ করছেন। এটা নতুন নয়। নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগকারীদের প্রমাণ দিতে বলেন চাকদহের বিধায়ক।