মৃত সন্তানকে শুঁড়ে তুলে হাঁটল শোকাকুলা মা, অনন্য মাতৃত্বের সাক্ষী রইল ডুয়ার্স
কথায় বলে বন্যরা বনে সুন্দর শিশু সুন্দর মাতৃক্রোড়ে। মানুষ হোক বা প্রাণী মা-সন্তানের সম্পর্ক এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সম্পর্ক। যা চিরন্তন, সন্তান হারা মায়ের ভালবাসার সাক্ষী থাকল ডুয়ার্স। মৃত সন্তানকে শুঁড়ে তুলে নিয়ে মাইলের পর মাইল পথ অতিক্রম করল মা হাতি, আর সন্তান হারা মায়ের এই দৃশ্য দেখে প্রত্যক্ষদর্শীদের চোখের জল বাঁধ মানল না।
দিন দুয়েক আগে বানারহাটের চুনাভাটি চা বাগানে একদল হাতি ঢুকে পড়েছিল। শুক্রবার ২৭মে সকালে হাতির দলটি আমবাড়ি চা বাগানে ঢুকে পড়ে। বেলা গড়াতেই ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে রেড ব্যাংক চা বাগানের অভিমুখে এগোতে থাকে হাতিগুলি। বনদপ্তর সূত্রেই জানা গিয়েছে, হাতির ওই দলটিতে প্রায় ৪০টি হাতি ছিল। চুনাভাটি চা বাগানের কাছেই একদিকে রয়েছে ডায়না আর অন্যদিকে রেতির জঙ্গল রয়েছে। বনকর্মীদের ধারণা, এই দুই অরণ্যাঞ্চলের কোন একটি থেকে ওই হাতির দলটি লোকালয়ে এসে পড়েছিল।
আমবাড়ি চা বাগানের বাসিন্দাদের কথানুযায়ী, ওই দলের হাতিগুলো রেড ব্যাংক চা বাগানের দিকে রওনা দিয়েছিল। তাদের বয়ান অনুযায়ী, ওই দলের মধ্যে থেকেই একটি হাতি অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল। প্রথমে হাতিটির গতিবিধি বুঝে উঠতে পারেননি স্থানীয় বাসিন্দারা। পরেই তারা বোঝেন যে, হাতিটির সঙ্গে একটি সদ্যোজাত বাচ্চাও রয়েছে। কিন্তু সদ্যজাত হাতিটি মৃত। শোকাতুর মা হাতি। সে তার বাচ্চাটিকে বারবার আদর করছে। মা তো মাই হয়, সন্তান মৃত হলেও মা হাতি তাকে ফেলে যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, কিছু পরেই তারা দেখতে পান মা হাতিটি মৃত সন্তানকে শুঁড়ে তুলে নিয়েছে। এইভাবেই প্রায় ৮ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে মা হাতি। যাত্রা পথে কখনও সে বাচ্চাটিকে মাটিতে রেখেছে আবার আদরও করছে। পথ পেরিয়ে মৃত সন্তানকে নিয়েই রেড ব্যাংক চা বাগানে পৌঁছয় মা হাতি।
এরপর ছড়িয়ে থাকা হাতি দলের বাকিরা বাচ্চাসহ মা হাতিটিকে ঘিরে দাঁড়ায়। খানিক বাদেই বিন্নাগুড়ি ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়াডের বনকর্মীরা পৌঁছান সেখানে। সন্তানের মৃত দেহকে আগলে তখনও দাঁড়িয়ে মা হাতি। এই দৃশ্য দেখে প্রত্যক্ষদর্শী এবং বনকর্মীরা চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। বন বিভাগের কর্মীরা জানাচ্ছেন, ময়নাতদন্তের পরেই সদ্যোজাত হস্তিশাবকের মৃত্যুর কারণ নির্দিষ্ট করে জানা যাবে।