ভারতে রয়েছে এমন মন্দির, যা তৈরি হয়েছে মসজিদের জায়গায়, জানেন কি?
মোদীর শাসনকালে দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে মন্দির-মসজিদ বিতর্ক। ভিয়েতনামের শিবলিঙ্গকে জ্ঞানবাপী মসজিদের বলে দাবি করা হচ্ছে; যদিও এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়! দেশের সম্প্রীতিকে নষ্ট করতে এমন ভিত্তিহীন প্রচার করেই চলেছে বিজেপি ও তদ ঘনিষ্ঠ হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। ইসলামি স্থাপত্যকে ধ্বংস করার হিড়িক লেগেছে দেশে। যে কোনও মসজিদের ক্ষেত্রেই যখন তখন বলা হচ্ছে, মন্দির ভেঙে মসজিদ গড়ে উঠেছে।
একতরফা বিভাজন ও বিদ্বেষের মাঝে দাঁড়িয়ে এক অন্যরকম ভারতের সন্ধান করল দৃষ্টিভঙ্গি। সে ভারত, যেখানে মসজিদগুলোকে মন্দিরে রূপান্তরিত করা হয়েছ। এমনই কয়েকটি মসজিদের কথা রইল দৃষ্টিভঙ্গির দর্শকদের জন্য।
খিলিজ জুম্মা মসজিদ, দৌলতাবাদ (ঔরঙ্গাবাদ), মহারাষ্ট্র:
দক্ষিণে সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য আলাউদ্দিন খিলজির পুত্র কুতুবুদ্দিন মুবারক খিলজি ১৪ শতকের গোড়ার দিকে দৌলতাবাদ দুর্গে একটি বিশাল মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দেন। একদা খিলজি রাজবংশের বিশাল সাম্রাজ্যের মধ্যে আয়তনের নিরিখে অন্যতম বৃহত্তম মসজিদ ছিল এটি। শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে মসজিদটি দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ করেই একদিন মসজিদের মিহরাবে অর্থাৎ প্রার্থনা স্থলে কেউ একজন একটি মূর্তি স্থাপন করে দেয়। তার পর থেকে স্থানীয়রা সেখানে পুজো শুরু করে এবং মসজিদটিকে ভারত মাতা মন্দির নামে ডাকা শুরু হয়।
জামা মসজিদ, ফারুখনগর, হরিয়ানা:
১৭৩২সালে মোঘল গভর্নর ফৌজদার খান গুরুগ্রাম জেলার ফারুখনগর শহরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মোঘল সম্রাট ফারুখসিয়ারের নামানুসারে নগরের নামকরণ করা হয়েছিল। জনপদ প্রতিষ্ঠার পরেই, ফৌজদার খানকে ফারুখনগরের নবাব ঘোষণা করা হয়। নগরের সীমানার মধ্যেই গড়ে ওঠে জামা মসজিদ। এলাকার সব মুসলমানরা এখানে নামাজ পড়তে আসতেন। ঐতিহাসিক রানা সাফভির লেখা থেকে জানা যায়, পাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তুদের আগমনের পর মসজিদটি মন্দির ও গুরুদ্বারে রূপান্তরিত হয়েছিল। মসজিদের একটি মিনার আজও জরাজীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।
দানা শির মসজিদ, হিসার, হরিয়ানা:
একদা হিসারে বিপুল সংখ্যক মুসলমান বসবাস করত। ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসনকালে গড়ে ওঠা বেশ কিছু ইসলামি স্থাপত্যের নিদর্শন রয়েছে এখানে। পীরসন্তদের সমাধির প্রথা অনুযায়ী, তাদের সমাধির পাশেই মসজিদ তৈরি করা হয়। দানা শির বাহলুল শাহের সমাধির পাশে দানা শির মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। ৪৭-এর দেশভাগের পর থেকে মসজিদের ডানদিকটি মন্দির হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যদিও কাঠামো, গম্বুজ ইত্যাদিই বলে দেয় স্থাপত্যটি আদপে একটি মসজিদ।
জামা মসজিদ, সোনপাত, হরিয়ানা:
সোনপাতে ছড়িয়ে রয়েছে মোঘল এবং প্রাক-মোঘল যুগের অজস্র স্থাপত্য। সেগুলোই এখন পর্যটনের প্রধান আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম খাজা খিজির সমাধি, একটি পুরানো দুর্গের ধ্বংসাবশেষ এবং জামা মসজিদ যা এখন দুর্গা মন্দির হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মন্দির হিসাবে ব্যবহৃত হলেও, স্থানীয়দের এটি বাড়ি মসজিদ নামে পরিচিত। মসজিদটি উনিশ শতকের গোড়ার দিকে নির্মাণ করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়।