কাশ্মীর ভ্রমণের খারাপ অভিজ্ঞতার কথা খোদ শাহকে চিঠিতে জানালেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সম্প্রতি কাশ্মীরে বেরাতে গিয়ে অসম্মানিত হয়েছেন। হেনস্থার শিকার হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ বিচারপতি নিজের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখে জানিয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ছুটিতে লে-লাদাখ ঘুরতে গিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। লাদাখের হান্দুরমান গ্রাম পর্যন্ত যেতে কোনও সমস্যা হয়নি। দ্রাসে আসার পর সমস্যার সূত্রপাত। বিচারপতি জানিয়েছেন, সাধারণত যে কোনও বিচারপতির কনভয়ে থাকেন স্থানীয় জেলা জজ কোর্টের কর্মী ও পুলিশ। তাঁরাই পথ চিনিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু দ্রাস পৌঁছে তিনি দেখেন কনভয়ে পুলিশের কোনও কর্মী বা আধিকারিক নেই। কারণ জানতে ২৩ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে দ্রাস থানায় যান বিচারপতি নিজেই। সেখানে গিয়ে দেখেন পুলিশ অফিসার ঘুমচ্ছেন। পুরো ঘটনা বলে অনুরোধ জানান তাঁকে। এরপর তাঁকে ওয়ার মেমোরিয়াল ঘুরিয়ে দেখান থানার এসএইচও। সে সময় বিচারপতিকে আশ্বাসও দেওয়া হয়, এরপর থেকে তিনি প্রোটোকল অফিসার পাবেন। আশ্বস্ত হয়ে শ্রীনগরের দিকে রওনা হন বিচারপতি।
শ্রীনগর পর্যন্ত পৌঁছতে কেউ যাতে দায়িত্ব নেয়, সে জন্য সোনমার্গের পুলিশের সাহায্য চান বিচারপতি। সেখানেও তাঁকে খারাপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। সোনমার্গের এসএইচও জানান থানার গাড়ি খারাপ। কোনও সাহায্য করা সম্ভব নয়। শুনেই সোনমার্গ থানায় যান বিরক্ত বিচারপতি। গিয়ে দেখেন ২৮টি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে এবং সবকটিই সচল। এরপর কোনওক্রমে সোনমার্গের হোটেলে রাত কাটান তিনি।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, দ্রাসের পুলিশ অফিসারদের মধ্যে বিদ্বেষী মনোভাব রয়েছে। নিজের এজলাসে বিচারপতি জানিয়েছেন, গল্প করতে করতে এক পুলিশ কর্মী তাঁকে বলেন, ‘‘তুরতুক তো আসলে পাকিস্তানের এলাকা! ভারত সেটা দখল করে নিয়েছে।’’ ওই পুলিশ অফিসার নিজেও তরতুকের বাসিন্দা। তাই তাঁর দাবি, সেখানকার সব তিনি জানেন। বিচারপতির আরও দাবি, সোনমার্গের অফিসারদের মধ্যেও একই মনোভাবের পরিচয় পান তিনি। শুধু পুলিশ নয়, একই ব্যবহার ছিল সরকারি পদস্থ অফিসারদের একাংশেরও। এরপর তিনি শ্রীনগরে যান।
সেখানে জম্মু-কাশ্মীরের হাই কোর্ট দেখতে যান তিনি। সেখানেও বিচারপতিকে প্রোটোকল অফিসার দেওয়ার কথা বলা হয়। সাধারণত প্রোটোকল অফিসার আসেন বিচারপতিকে রিসিভ করতে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রোটোকল অফিসের সাধারণ এক কর্মীকে পাঠানো হয়েছিল। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, শ্রীনগরে তাঁর জন্য অত্যন্ত খারাপ মানের হোটেলের ব্যবস্থা করা হয় বলেও অভিযোগ। বিচারপতি বলেন, প্রোটোকল অফিসের কর্মী তাঁকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘জাহান্নমে যাও’’।
এই পুরো অভিজ্ঞতাটাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে লিখে জানিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।