দেশ বিভাগে ফিরে যান

জনাদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকার ফেলা, ঘোড়া কেনাবেচা বিজেপির পুরোনো অভ্যাস?

June 25, 2022 | 2 min read

ছবি সৌজন্যেঃ The Week

১৯৮৩-এর জুন আর ২০২২-এর জুন; মাঝে কেটে গিয়েছে ৩৯ টি বছর। ১৯৮৩র জুনে তৈরি হয়েছিল সরকারিয়া কমিশন। যে কমিশন দরুন, কোন নির্বাচিত রাজ্য সরকারকে আর ইচ্ছে করলেই বরখাস্ত করতে পারে না কেন্দ্র। আজ ফের এক জুন, মহারাষ্ট্র সরকারকে ফেলার উন্মত্ত নেশায় মেতেছে বিজেপি। কিন্তু আজ আর কোথায় আইন, কোথায় নীতি! সংসদীয় গণতন্ত্র বা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর তোয়াক্কা করেনা ভারতের শাসক দল। কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার সুযোগে রাজ্য সরকারগুলোকে হেলায় গুঁড়িয়ে দিচ্ছে বিজেপি। হেরে যাচ্ছে মানুষের জনাদেশ। অর্থের কাছে, ক্ষমতার কাছে পরাজিত হচ্ছে জনগণের রায়। মানুষের দ্বারা, মানুষের জন্য, মানুষের সঙ্গে কেবল তর্জমায় এসে থেমেছে।

২৪ জুন দেশের সাংবিধানিক প্রধান নির্বাচনের জন্য, এনডিএ মনোনীত প্রার্থীকে মোদী মনোনয়ন দিচ্ছে আর অন্যদিকে তার দল দেশের একটি রাজ্যের সরকার ফেলে দেওয়ার জন্য মরিয়া লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আদপে এটাই বিজেপির রাজনৈতিক নির্যাস, সাম্প্রদায়িক ক্ষমতালোলুপ একটি দল কেবল ক্ষমতাই চায়। প্রশ্নাতীত ক্ষমতা, যার কাছে ফ্যাসিবাদও হয়ত শিশু।

তবে মহারাষ্ট্রই প্রথম নয়, ঘোড়া কেনা-বেচাকে অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছে বিজেপি। মোদী আমলের আট বছরে পড়েছে বহু রাজ্য সরকার। প্রত্যেকটির নেপথ্যেই বিজেপি।

২০১৬, অরুনাচল প্রদেশ:
৬০ আসনের অরুনাচল প্রদেশে ২০১৪ সালে বিজেপি পেয়েছিল মোটে ১১ টি আসন। ৪২ জন বিধায়ক নিয়ে সরকার গড়ে কংগ্রেস। কিন্তু ২০১৬তে ৪১ জন কংগ্রেস বিধায়ক হাত ছেড়ে পিপলস পার্টি অরুনাচলে যোগ দেন। যদিও তা ছিল মাস্কিং এফেক্ট। সেই বছরই সব বিধায়ক বিজেপিতে যান এবং সে রাজ্য বিজেপি সরকার তৈরি হয়।

২০২০, মধ্যপ্রদেশ:
২০১৮-এর মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে ফলাফল বেরোনোর পর নির্দলসহ ১২১ জন বিধায়কের সমর্থন নিয়ে কংগ্রেস নেতা কমলনাথ সরকারে বসেন। কিন্তু ২০২০-এর মার্চে বিজেপি ফের একবার ঘোড়া কেনা বেচায় নেমে পড়ে। তৈরি করে নিজেদের সরকার।

২০১৭, মণিপুর:
৬০ আসনের মণিপুর বিধানসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় কংগ্রেস। কিন্তু ২৮ জন হাতের বিধায়কের মধ্যে থেকে ৯ জন বিধায়ককে হাতিয়ে নিয়ে ক্ষমতার গদিতে বসে বিজেপি।

২০১৭, গোয়া:
গোয়ার মানুষের জনাদেশকেও বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে বিজেপি। ৪০ বিধানসভা আসনের গোয়ায়, ১৭ টি আসন জিতে একক বৃহত্তর দল হয় কংগ্রেস। কিন্তু পিছন দরজা নিয়ে গদিতে বসে বিজেপি। পরে ২০১৯ সালে কংগ্রেসের আরও ১০ বিধায়ককেও নিজের দলে নিয়ে আসে বিজেপি।

২০১৯, কর্ণাটক:
সরকার গঠনের এক বছরের মধ্যেই ১৬ জন বিধায়ক কার্যত কিনে কংগ্রেস ও জনতা দলের সরকার ফেলে দেয় বিজেপি। ২০১৯ এ কর্নাটকের মসনদে বসেন বিজেপির ইয়েদুরাপ্পা।

পুডুচেরী:
কোন বিজেপি না থাকা সত্ত্বেও ৩৩ আসনের পুডুচেরী বিধানসভায় ক্ষমতা দখল করেছিল বিজেপি।

২০১৭, উত্তরাখণ্ড:
হরিশ রাওয়াতের সরকার ২০১৬ সালের মার্চে উত্তরাখণ্ডে ক্ষমতায় আসে। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই ৯ জন কংগ্রেস বিধায়ককে দলে টেনে এনে ২০১৭ তে সরকার গড়ে ফেলে পদ্ম শিবির।

২০১৮, জম্মু কাশ্মীর:
২০১৪ সালে নির্বাচনের ফল ত্রিশঙ্কু হওয়ায় বিজেপি মেহবুবা মুফতির সরকারের জোটসঙ্গী হয়। কিন্তু ২০১৮তে জোট ভেঙে বেরিয়ে এসে সরকার ফেলে দেয় বিজেপি।

২০২২, মহারাষ্ট্র:
নাটক চলছে, যবনিকা পতন সময়ের অপেক্ষা। বিদ্রোহী শিবসেনা বিধায়কেরা পঙ্গপালের মতো বিজেপি শাসিত ডবল ইঞ্জিন রাজ্যে ঘুরছে, আজ গুজরাত কাল অসম। বলাইবাহুল্য, শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপি সরকার ফেলার সব বন্দোবস্ত সেরে বিজেপি। যদি কোন চমৎকার ঘটে সরকার বেঁচে যায়, তবে তা হবে ভারতীয় রাজনীতির এক বিরাট বড় চমক!

কিন্তু কেন এই তথ্য পরিসংখ্যানের অবতারণা? জনগণ নির্বাচিত সরকারকে কত সহজে বদলে ফেলে বিজেপি। দাঁড়িপাল্লায় জনাদেশের ভার হয়ত বিজেপির ভারতের সবসময় কমই হয়। নয়ত বিপুল জন সমর্থন নিয়ে আসা সরকারগুলিকে কী করে বারবার ফেলে দেন শাহ-মোদীরা। যে সংবিধানের শপথ নিয়ে মোদী প্রধানমন্ত্রী সেই সংবিধানের চালিকাশক্তি দেশের গণতন্ত্রকে পণ্যে পর্যায়ে নামিয়ে আনতে মোদীর লজ্জা করে না?

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#India, #bjp, #politics, #Democracy, #horse trading

আরো দেখুন