রাষ্ট্রপতির হওয়ার দৌড়ে দ্রৌপদী মুর্মু, তবু ওড়িশায় আদিবাসীদের উপর দমনপীড়ন অব্যাহত
ওড়িশার আদিবাসী সমাজের একজন প্রতিনিধি হিসেবে এবার রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হয়েছেন দ্রৌপদী মুর্মু। অথচ তাঁর নিজের রাজ্যে ঢিনকিয়ায় একটি ইস্পাত করখানার বিরোধিতা করার জন্য আদিবাসীদের নির্মম দমন-পীড়নের শিকার হতে হচ্ছে।
ওড়িশার আদিবাসী অধ্যুষিত ওই অঞ্চলটি প্রথমে কোরিয়ান সংস্থা পসকো এবং জিন্দলদের মালিকানাধিন জেএসডব্লিউ উৎকল স্টিল লিমিটেডের বিরোধীতা করে স্থানীয় পান চাষি এবং মৎস্যজীবীদের আন্দোলনের কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠেছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ছয় মাসে ওই স্টিল প্ল্যান্টের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী ৬০ জনেরও বেশি মানুষক গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জগৎসিংহপুর জেলায় অবস্থিত এই এলাকার গ্রামগুলির মানুষ নিজেদের এলাকায় দিনের পর দিন পুলিশি অভিযান, নৃশংস দমনপীড়ন দেখেছে, সহ্য করছে। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এখানে প্রতিনিয়ত আদিবাসীদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তাদের প্রতিদিনই সরকারি হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে।
ধিনকিয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়, যখন এই বছরের জানুয়ারির পরে ৫০০ জনের বেশি পুলিশ আধিকারিক গ্রামে ঢুকে বাসিন্দাদের উপর লাঠি চার্জ করে এবং আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। তা নিয়ে স্থানীয় আদিবাসীদের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভ তৈরি হয়।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, জিন্দল গ্রুপের প্রতিবছর ১৩.২ মিলিয়ন টন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ইস্পাত প্রকল্পটি শুধু মাত্র স্থানীয়দের জীবন-জীবিকার উপরই প্রভাব ফেলবা না, এলাকার পরিবেশকেও ধ্বংস করবে।
এর আগে ওই এলাকায় পসকো ৫২,০০০ কোটি টানা বিনিয়োগে ১২ মিলিয়ন টন উৎপাদনের ক্ষমতা সম্পন্ন প্রকল্প স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিল। ২০১১ সালে গোবন্দপুর, ঢিনকিয়া এবং নুয়াগাঁওর গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি বন অধিকার আইন অনুযায়ী পসকোকে জমি হস্তান্তরের বিরুদ্ধে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
দীর্ঘ আন্দোলন এবং স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে শেষ পর্যন্ত কোরিয়ান সংস্থা পসকো তাদের প্রস্তাবিত প্রকল্প থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু জিন্দলরা স্থানীয় মানুষদের ভাবাবেগকে অবজ্ঞা করে চলেছে এখনও।
ওড়িশায় আদিবাসীদের বঞ্চনার এরকম অনেক ঘটনা আছে। যা বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে আসে বা আসছে। দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি পদ প্রার্থী হওয়ায়, কোনও নতুন আশার আলো দেখছেন না ওরিশায় দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করা আদিবাসী সংগঠনগুলি। তাঁদের মতে দ্রৌপদী মুর্মু এর আগে ওড়িশার আদিবাসী এলাকা থেকেই বিজেপি’র টিকিটে বিধায়ক হয়েছেন। কিন্তু তাঁকে কখনও আদিবাসীদেরা সমস্যা, যন্ত্রনা নিয়ে আওয়াজ তুলতে বা কোনও কথা বলতে দেখা যায়নি। ফলে তিনি রাষ্ট্রপতি হলেও আদিবাসীদের কোনও সুবিধে হবে বলে মনে হয়না।