হচ্ছে টা কী? বিভাগে ফিরে যান

কর্ণওয়ালিশ থেকে বিধান রায়, ইতিহাস লেখা আছে যে রাস্তায়

July 3, 2022 | 2 min read

শৌভিক রাজ

বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা খ্যাতনামা চিকিৎসক বিধান রায়ের নামেই আজ এই রাস্তার নাম হয়েছে বিধান সরণি। শ্যামবাজার পাঁচমাথা মোড় থেকে হ্যারিসন রোড ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার নাম বিধান সরণি। তারপরের অংশের নাম কলেজ স্ট্রিট। বইপাড়ায় খানিক বাদে আসি, বই পড়ার কথা বলেনি। ছোটবেলায় পড়ার বইতে ইতিহাসে আমরা কর্ণওয়ালিশের নাম পড়েছি। ১৭৯৩-তে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রবর্তন করেন কর্ণওয়ালিশ। সেই কর্নওয়ালিশের নামেই কর্ণওয়ালিশ স্ট্রিটের নাম রাখা হয়েছিল।

এই রাস্তার ২১ নং বাড়ি থেকেই বেথুন স্কুলের পথ চলা শুরু হয়েছিল। এখানেই আছে হাতিবাগান। পুজোর সময় যা জ্যাম হয়! দুপাশে জুড়ে পসরা সাজিয়ে দোকানিরা বসেন সারা বছর। এই রাস্তার আজও ট্রাম চলে নিয়মিত। স্টার থিয়েটার এখন এখানেই। এককালে এই রাস্তার এপাশ-ওপাশ জুড়ে এত হল ছিল যে, এই তল্লাট দায়িত্ব নিয়ে সিনেমা হিট করিয়ে দিতে পারত। দিতও তাই! নাটক-থিয়েটার-সিনেমা নিয়ে বেশ জম্পেশ আসর।
কেবল বিনোদন না এই রাস্তায় রয়েছে বিপ্লবের ছোঁয়া। লালা লাজপৎ রাইয়ের হত্যার বদলা নিতে ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার স্যান্ডারসকে হত্যা করে ছদ্মবেশে কলকাতায় পালিয়ে এলেন ভগৎ। বারবার ডেরা বদলে বদলে ভগৎ সিং আশ্রয় নিয়েছিল আর্য সমাজ মন্দিরের ছাদের ঘরে। যার এখনকার ঠিকানা ১৯ নম্বর বিধান সরণি। তবে মারামারির সঙ্গে এই চত্বরের আলাপ হয়ত অনেক দিনে আগে থেকেই ছিল। মনে করা হয় সিরাজের কলকাতা আক্রমণের সময় হাতির ছাউনি এখানেই পড়েছিল বলে, হাতিবাগান নাম হয়েছে।

একটি ভিন্নমতও প্রচলিত রয়েছে। সেই মতানুযায়ী, রাজা নবকৃষ্ণ দেবের হাতিশালা ছিল বর্তমানের এই হাতিবাগান অঞ্চলে, তা থেকেই হাতিবাগানের নাম এমন জনশ্রুতির সৃষ্টি হয়েছে। বিপ্লব হল, সিনেমা হল, এবার একটু ধম্ম না হলে হয়?

ঠনঠনিয়ার প্রসিদ্ধ কালী বাড়িটি এখানেই। মা সিধেশ্বরী এখানেই বিরাজ মান। ঠনঠনিয়া নাম নিয়েও দুটি কিংবদন্তি আছে। কথিত আছে, এই অঞ্চলে কয়েকটি বাড়িতে ছিল কামারদের বাস, ফলে লোহার কাজ হত সারাদিন। দিনরাত ‘ঠন-ঠন’ শব্দ হত। সেই লোহা পেটানোর শব্দের থেকেই নাম হয় ঠনঠনিয়া।
আবার অন্য একটি মতে, বহু পূর্বে ওই এলাকায় ডাকাতের উপদ্রব ছিল। ডাকাত পড়ার সম্ভাবনা দেখাদিলে, পল্লীবাসীবৃন্দকে সজাগ করতে ঠন ঠন করে মন্দিরের ঘন্টা বাজানো হত, সেই থেকেই নাম ঠনঠনিয়া।

এবার এম জি রোডের ক্রসিং ক্রস করব, পরের অংশটিই কলেজপাড়া। রাস্তার নাম হল কলেজ স্ট্রিট। ১৮১৭-এর ২০শে জানুয়ারি হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত। যা আজকের প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। সংস্কৃত কলেজও ছিল এখানে। হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রাস্তার নামের সঙ্গে কলেজ শব্দটি জুড়ে গিয়েছিল। মাত্র ২০ জন ছাত্রকে নিয়ে চিৎপুরের গৌরচাঁদ বসাকের বাড়িতে হিন্দু কলেজের ক্লাস শুরু হয়েছিল। এরপর কলেজ বউবাজার ঘুরে কলেজ স্ট্রিটে এসে পৌঁছায়। কলেজ হওয়া মানেই পড়ুয়াদের আনাগোনা। পড়ার জন্য চাই বই। ১৮১৭ সালে ক্যালকাটা স্কুলবুক সোসাইটি তৈরি হয়েছিল। তাদের ছাপাখানা ছিল এই রাস্তাতেই। ১৮২৬ থেকে তারা পুরোদমে বইয়ের ব্যবসা শুরু করে। সে সময় ইংরেজি বইয়ের ব্যবসায় তারাই ছিল পথিকৃৎ। এর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে বইয়ের দোকান। বই কারবার জমে উঠেই তৈরি হয়ে গেল আজকের বইপাড়া।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Cornwallis street, #HTK, #Bidhan sarani

আরো দেখুন