১৮ দিনে ৮ বার বিপদের মুখোমুখি স্পাইসজেটের বিমান, জবাব তলব DGCA-র
স্পাইসজেট বিমানের বিপত্তি অব্যাহত। তালিকা ক্রমশ দীর্ঘতর হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে লাগাতার অস্বাভাবিকভাবে স্পাইসজেটের বিমানে কিছু না কিছু ঘটনা ঘটেই চলেছে। এক-দু’বার ঘটলে তা কাকতালীয়ভাবে হতেই পারে কিন্তু এক্ষেত্রে এমন বিপত্তি বারেবারে হওয়ায় ঘনাচ্ছে রহস্য। এবার সেই অস্বাভাবিকত্বের কারণ খুঁজতেই জবাব তলব করা হল সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে।
সিভিল এভিয়েশনের ডিরেক্টরেট জেনারেল অর্থাৎ DGCA, স্পাইসজেট এয়ারলাইনটির কার্যপদ্ধতির ত্রুটিবিচ্যুতিগুলো খুঁজে পেয়েছে। রুগ্ন রক্ষণাবেক্ষণ, দুর্বল অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বিক্রেতাদের পাওনা টাকা সময়মতো না মেটানোর ফলে, স্পাইসজেটের যন্ত্রাংশের ঘাটতি দেখা দেয়। আবহাওয়া সংক্রান্ত রাডার বিকল হওয়ার কারণে ৫ জুলাই চীনগামী স্পাইসজেট কার্গো বিমান কলকাতায় ফিরে আসে। স্পাইসজেট বিমানে এই নিয়ে বিগত ১৮ দিনের মধ্যে এমন প্রযুক্তিগত ত্রুটির মতো আটটি ঘটনা ঘটল।
DGCA তাদের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, একাধিকক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, বিমানটি যেখান থেকে উড়েছিল সেখানেই ফিরে গিয়েছে, নয়ত বিপদজনকভাবে কোনরকমে গন্তব্যে অবতরণ করেছে। এর কারণ হিসেবে তারা জানাচ্ছেন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের কারণেই এমন ত্রুটির ঘটনা ঘটছে। আদপে প্রযুক্তির কোন রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে না।
DGCA আরও জানাচ্ছে, ২০২১ সালে সেপ্টেম্বরে করা DGCA-এর আর্থিক মূল্যায়ণের রিপোর্ট থেকেও জানা গিয়েছে, স্পাইসজেট এয়ারলাইনের সরবরাহকারী বা অনুমোদিত বিক্রেতাদের বিমান কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে বকেয়া টাকা প্রদান করছে না। ফলে যন্ত্রণাংশ ও জিনিসপত্রের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। স্পাইসজেট লিমিটেড তার যাত্রীদের নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং নির্ভরযোগ্য বিমান পরিষেবা দিতে ব্যর্থ৷ দেশের অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াও DGCA-এর বিজ্ঞপ্তি টুইট করে লিখছেন, সবার আগে যাত্রীদের নিরাপত্তা। সামান্যতম ত্রুটি বিচ্যুতি যা যাত্রী নিরাপত্তাকে প্রশ্ন চিহ্নের সামনে এনে দাঁড় করাচ্ছে, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সেই ত্রুটিগুলোর তদন্ত করা হবে এবং অবশ্যই তা সংশোধন করা হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে স্পাইসজেট বিমানের কিছু ঘটনা:
৪ মে: ওয়েল ফিল্টারের সমস্যার কারণে চেন্নাই-দুর্গাপুরগামী বিমানের একটি ইঞ্জিন মাঝ আকাশে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফিরে আসে।
২৮ মে: ২৩,০০০ ফুট উচ্চতায় মুম্বাই-গোরখপুরের একটি বিমানের উইন্ডশিল্ড ফাটল ধরায়, বিমানটি ফিরে আসে।
১৯ জুন: উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সামঞ্জ্য রেখে চাপ তৈরি না হওয়ায়, জব্বলপুরগামী একটি বিমান দিল্লি ফিরে এসেছিল।
১৯ জুন: পাটনা থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া একটি বিমানে টেক অফের পরেই পাখির আঘাত লেগে ইঞ্জিনে আগুন ধরে যাওয়ায় জরুরিভিত্তিতে অবতরণ করেছিল।
২ জুলাই: কেবিনে ধোঁয়া দেখা যাওয়ার, জব্বলপুরগামী একটি বিমান দিল্লি ফিরে আসে।
৫ জুলাই: উইন্ডশীল্ড ফাটলের কারণে কান্ডলা-মুম্বাইয়ের একটি বিমান মুম্বাই বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে।
৫ জুলাই: জ্বালানী সূচক বিকল হয়ে যাওয়ায় দিল্লি-দুবাইগামী একটি বিমান করাচির দিকে যেতে শুরু করে।
৫ জুলাই: আবহাওয়া সংক্রান্ত রাডার ব্যর্থ হওয়ার চীনগামী একটি কার্গো বিমান কলকাতায় ফিরে আসে।
প্রসঙ্গত, বিগত তিন বছর ধরে লাভের মুখ দেখে না স্পাইসজেট। লোকসানে ভরে বিধ্বস্ত অবস্থা সংস্থাটির। ২০১৮-২০১৯, ২০১৯-২০২২ এবং ২০২০-২০২১ সালে যথাক্রমে ৩১৬ কোটি, ৯৩৪ কোটি এবং ৯৯৮ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে স্পাইসজেট।