মোদী সরকারের টালবাহানায় মেট্রোর ১০ কোটি টাকা লোকসান, নষ্ট ৯ লক্ষ শ্রমদিবস
দীর্ঘদিনের টালবাহানার পর অবশেষে শিয়ালদহ মেট্রোর উদ্বোধন হল। কিন্তু কেন এই কাল বিলম্ব? উত্তর মোদী সরকারের প্রচার সর্বস্ব রাজনীতি। শোনা গিয়েছিল মোদী নিজে শিয়ালদহ মেট্রোর উদ্বোধন হবে। তাই বেড়েছে অপেক্ষার পরিমাণ। আর তাতেই ক্রমে ক্রমে পিছিয়েছে উদ্বোধনের দিনক্ষণ। প্রসঙ্গত, বিগত ২৪ মার্চ কমিশন অব রেলওয়ে সেফটি শিয়ালদহ মেট্রো স্টেশন চালুর জন্য প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দেয়। আরও কিছু কাজ শেষ করতে তিন সপ্তাহ সময় লাগে। সংখ্যাতত্ত্বের হিসেব বলে, ১৪ এপ্রিল থেকে শিয়ালদহ মেট্রো যাত্রী চলাচলের জন্যে পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত হয়ে যায়। কিন্তু শিয়ালদহ মেট্রো চালু হয়েছে জুলাই মাসের ১৪ তারিখ!
এইভাবেই তিন মাস সময় অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাওয়ার পরেও, সুজ্জিত স্টেশন, রেললাইন সব পড়ে রইল। প্রস্তুত হয়েও যাত্রী পরিবহণ করতে পারল না মেট্রো। মোদী সরকারের খামখেয়ালিপনার কারণে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রায় ১০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাল। প্রধানমন্ত্রী এলেনই না, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি এসে ১১ জুলাই হাওড়া থেকে উদ্বোধন করলেন। ১৪ জুলাই থেকে শুরু হল যাত্রী চলাচল। যাত্রীরা নিরাশ করেনি মেট্রোকে। টিকিট বিক্রির অঙ্কের দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়।
চালুর আগে টিকিট বিক্রি
সোমবার ৫২,১৯৮ টাকা
মঙ্গলবার ৬৬,১৬১ টাকা
বুধবার ৮১,৪১৯ টাকা
চালুর পরে টিকিট বিক্রি
বৃহস্পতিবার ৭,৭১,৮৮২ টাকা
শুক্রবার ৬,৯৮,৬১৮ টাকা
শনিবার ৫,৩২,১০৮ টাকা
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মেট্রো পরিষেবা নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ তিন মাস আগে থেকেই শুরু হলে এই কদিনে বিপুল পরিমাণ আয় করত মেট্রো। প্রধানমন্ত্রীর হাতে উদ্বোধনের অপেক্ষায় মেট্রোর কোটি কোটি টাকা নিশ্চিত আয় ধ্বংস হল।
নয়া এই রুটে মেট্রো চলাচল শুরু হওয়ার পরে টিকিট খাতে ১০ গুণেরও বেশি আয় বেড়েছে মেট্রোর। সেই হিসেব অনুযায়ী, টিকিট খাতেই রেলের প্রতি মাসে গড়ে ২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা লোকসান হয়েছদ। ক্ষতির পরিমাণ তিন মাসে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা। এছাড়াও, স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মীদের বেতনসহ নানান খাতে দৈনিক প্রায় ৩ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। যার মোট পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। সব খাত মিলিয়ে রেলের প্রায় ১০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
মোদী সরকারের টালবাহানার জন্যে ৯ লক্ষ শ্রমদিবস নষ্ট হয়েছে। শিয়ালদহ থেকে সেক্টর ফাইভ যেতে সড়কপথে সময় লাগে প্রায় দুই ঘন্টা। মেট্রো চালু হওয়ায় তা কমে ২১ মিনিটে এসে পৌঁছেছে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর যাত্রীসংখ্যা বেড়ে ৩১ হাজার হয়েছে। বিগত তিন মাসে বিপুল সংখ্যক মানুষের দৈনিক গড়ে ১০০ মিনিট করে সময় অপচয় হয়েছে। যা শ্রমদিবস নষ্ট করেছে।