দেশ বিভাগে ফিরে যান

ছেলে-মেয়েদের একসঙ্গে বসা বারণ? নীতিপুলিশির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ পড়ুয়াদের

July 22, 2022 | 2 min read

ছবি সৌজন্যে: ডেইলি হান্ট

সমাজের দুটি দিক; একটি অগ্রগতির কথা বলে, আরেকটি অশিক্ষা ও সংস্কারের আঁধারে ডুবিয়ে নিয়ে যায় সমাজকে।তিরুবনন্তপুরমের একটি বাস স্ট্যান্ড সাক্ষী থাকল এক অভিনব প্রতিবাদের। ওই বাস স্ট্যান্ডের বেঞ্চ ছেলেমেয়েদের এক সঙ্গে বসে থাকতে দেখে, বাধা দেওয়ার জন্য তাদের উপর নীতি পুলিশি ফলানো হল। ছেলে-মেয়েদের এক সঙ্গে বসা ঠেকাতে, বেঞ্চটিকে তিনটি পৃথক আসনে ভাগ করে দেওয়া হল। আর এই ঘটনার প্রতিবাদে পার্শ্ববর্তী একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়ারা একে অপরের কোলে বসে এবং সেই ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে প্রতিবাদ জানালেন। তিরুবনন্তপুরম শহরের মহানাগরিক আর্য এস রাজেন্দ্রন পড়ুয়াদের এহেন পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দিনের বেলা এবং গভীর রাতে বাস স্ট্যান্ডের মধ্যে কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং ত্রিভান্দ্রম অর্থাৎ সিইটির পড়ুয়াদের আচরণ ও ব্যবহার তারা সহ্য করতে পারছেন না। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে ছেলে-মেয়েদের একসঙ্গে বসা রুখতে তারা বসার জায়গা তিনটি ভাগে বিভক্ত করেছেন তা অস্বীকার করছেন স্থানীয় মানুষেরা। তাদের দাবি, জরাজীর্ণ বাস স্ট্যান্ড সংস্কার করতে এবং করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বেঞ্চটিকে তিনটি আসনে ভাগ করা হয়েছিল। যদিও পড়ুয়ারা এসব দাবি মানতে নারাজ।

বাসিন্দাদের পাল্টা দাবি, ছেলে-মেয়েদের একসঙ্গে বসার জন্য কলেজ ক্যাম্পাস রয়েছে। সাধারণ মানুষ যাতে বাসের জন্য অপেক্ষা করে, তাই বাস স্ট্যান্ড তৈরি হয়েছে। দিনে রাতে পড়ুয়ারা বাস স্ট্যান্ডের ভিতরে বসে থাকে, তা তারা মেনে নিতে পারেন না। স্থানীয় বাসিন্দারা কয়েক বছর আগে ওই বাস স্ট্যান্ড তৈরি করেছিল। বাস স্ট্যান্ডটির অবস্থা খারাপ হওয়ায় তারা সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সংস্কার করতেই, বসার আসনটিকে তিনটি পৃথক আসনে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। তাদের দাবি, সামাজিক দূরত্ব কারণেই এমনটাই করা। আগেও তিনজন বসতে পারতেন, এখনও বসতে পারতেন। সংস্কারের কাজ এখনও বাকি রয়েছে বলেও জানা তারা।​

সোশ্যাল মিডিয়ায় পড়ুয়াদের পোস্ট করা ছবি ভাইরাল হওয়ার পরে, তা জানতে পারেন মহানাগরিক রাজেন্দ্রন। তিনি ২১ জুলাই বৃহস্পতিবার এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের পর তিনি নিজেও একটি ফেসবুক পোস্ট করেন। তিনি লিখছেন, যেভাবে বেঞ্চটিকে তিনটি আসনে বিভক্ত করা হয়েছে, তা সঠিক তো নয়ই, আর কেরালার মতো প্রগতিশীল রাজ্যে এই ঘটনা অসমীচিন। তার কথায় তাদের রাজ্যে ছেলে-মেয়েদের একসাথে বসতে কোন নিষেধাজ্ঞা কোনদিন ছিল না, আর আজও নেই। কিন্তু যারা এখনও বিশ্বাস করেন যে, ছেলে-মেয়েদের একসঙ্গে বসা অনুচিত; তারা আজও প্রাচীন কালে বাস করছেন। তিনি আরও লেখেন, যারা এখনও বোঝে না যে সময় বদলে গিয়েছে, তাদের প্রতি সহানুভূতি করা উচিত। পরিদর্শনের সময় সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মেয়র জানান, ওই এলাকার অনেকেই প্রবীণ মানুষ। তাই তারা এখনও পুরোনো চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি।

মেয়রের পরিদর্শনের সময় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়ারাও উপস্থিত ছিলেন। তারা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এই প্রথমবারের জন্য তারা এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেন। এর আগে কখনও এমন হয়নি। তারা অভিযোগ করছেন, যখনই বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুদের সঙ্গে তারা ওই এলাকায় আসা যাওয়া করেন, তখনই তাদের উপর নেমে আসে নীতি পুলিশগিরির বেনজির আক্রমণ। ওই এলাকায় নিয়মিতভাবে তারা এমন নীতি পুলিশগিরির মুখোমুখি হন। তাদের কথায়, দীর্ঘদিন ধরে তারা এই সমস্যায় ভুগছেন। সেই জন্যেই তারা নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যাতে দ্বিতীয়বার না ঘটে, তাই তারা ছবিগুলো পোস্ট করেন। মুহূর্তের মধ্যেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। তবে ছবি ভাইরাল হওয়ায় আশা করেননি বলেই জানাচ্ছেন পড়ুয়ারা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#moral policing, #trivandrum, #Protest, #Romance, #kerala, #Couples

আরো দেখুন