মোদী সরকারের বঞ্চনার শিকার হয়ে আদালতের দারস্থ বাংলার জওয়ান
দীর্ঘদিন ধরে ‘সেনাবাহিনী আবেগ’-কে ব্যবহার করে ভোট বৈতরণী পেরোচ্ছে বিজেপি। কিন্তু কেমন আছেন দেশের বীর সৈনিকেরা, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নয় মোদী সরকার। মেরুদণ্ডে আটকে রয়েছে বুলেট, এখনও ঠিক করে দাঁড়াতে পারেন না নদীয়ার নবদ্বীপের সিআরপিএফ জওয়ানের নিগমপ্রিয় চক্রবর্তী। কাশ্মীরের এক জঙ্গি হামলা বদলে দিয়েছে তাঁর জীবনের। ওই বুলেটবিদ্ধ অবস্থাতেও দু’জন জঙ্গিকে হত্যা করেছিল বাংলা মায়ের এই বীর সন্তান। কিন্তু, বীরত্বে এহেন নজির স্থাপন করার পরেও প্রাপ্য সম্মানটুকু জোটেনি তাঁর। মোদী সরকারের তরফে মেলে সামান্য সাহায্য। নিরুপায় হয়ে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন।
২০১৬ সালের ২৫ জুনের ঘটনা, সিআরপিএফের ১৬১ নম্বর ব্যাটালিয়ন পুলওয়ামার লেথপোরা ক্যাম্প থেকে শ্রীনগরে ফিরছিল। কনভয়ের সামনে ৩, পিছনে ১ গাড়ি; চতুর্থ বাসে ছিলেন জওয়ানরা। বাসের দরজার ঠিক পাশেই ডানদিকের একটি সিটে বসেছিলেন নিগমপ্রিয়। পাম্পোরে পৌঁছতেই জঙ্গি হামলার মুখোমুখি হয় তাঁদের কনভয়। মুহূর্তের মধ্যেই জঙ্গিদের গুলিবর্ষণ শুরু হয়। জঙ্গি হামলার মাস্টার মাইন্ড ছিলেন হিজবুল কমান্ডার বুরহান ওয়ানি। হামলায় প্রাণ যায় ৮ জওয়ানের, ১৮ জন আহত হন। নিগমপ্রিয়ের বাঁ হাতের কব্জি ভেদ করে বেরিয়ে যায় একটি গুলি। আরেকটি গুলি পাঁজরার হাড় ছুঁয়ে ফুসফুস অতিক্রম করে নাভির কাছে পৌঁছেছিল। পিছন দিক দিয়ে আরেকটা বুলেট তাঁর মেরুদণ্ডে আটকে যায়। বাকি জওয়ানদের প্রাণ বাঁচিয়ে লড়াই চালিয়ে চান তিনি। ১১টি অস্ত্রোপচারের পরে প্রাণে রক্ষা পান তিনি।
বীরত্বের এমন নজির স্থাপন করেও বঞ্চিত এই বাঙালি জওয়ান। প্রাপ্য সম্মাননাটুকু দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি মোদী সরকার।নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতাল ইতিমধ্যেই তাঁকে ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী ঘোষণা করেছে। কিন্তু সিআরপিএফ তা মানতে রাজি নয়। ফলে প্রাপ্য বিশেষ আর্থিক সুবিধাটুকুও মেলেনি। শুধু তাই নয়, দিল্লিতে এইমসেও তাঁকে নিজের খরচেই চিকিৎসা করাতে যেতে হয়।
অবশেষ নিজের প্রাপ্যের দাবিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন এই জওয়ান। বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে তাঁর আইনজীবী সুদীপ্ত পান্ডা সমস্ত বিবরণ তুলে ধরেন। সিআরপিএফ কর্তৃপক্ষকে তিন মাসের মধ্যে মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করে তাঁর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। সেই সঙ্গেই শারীরিক অক্ষমতার হার নির্ধারণ করে প্রাপ্য সুযোগ পাওয়ার দেওয়ার কথাও বলেছে আদালত। নিগমপ্রিয়কে কোর্ট অব এনকোয়ারিতে বসার সুযোগও দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিগমপ্রিয়ের শারীরিক অবস্থার পর্যবেক্ষণ হওয়া পর্যন্ত তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ ও প্রাপ্য সুজগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না, বলেই জানিয়েছে আদালত।