কংগ্রেস বিধায়কদের গাড়িতে টাকা উদ্ধার কাণ্ডে শুভেন্দু যোগ? তদন্তের দাবি তৃণমূলের
৩০ জুলাই হাওড়ায় ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেস বিধায়কদের গাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এবার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবিতে সরব সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস। এদিন তৃণমূলের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে দাবি করা হয়, এই টাকা উদ্ধার কান্ডে এ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সরাসরি যুক্ত রয়েছেন। সেই সঙ্গে এই টাকার উৎস কোথায়, কংগ্রেস বিধায়করা শেষ কার সঙ্গে দেখা করেন, কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছে এই সব প্রশ্নে তৃণমূল তরফে কংগ্রেসের কাছে জবাবদিহিও চাওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ডের তিন কংগ্রেস বিধায়ককে ৩ আগস্ট পর্যন্ত সিআইডি পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূলের তরফে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা, তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুনাল ঘোষ এবং রাজ্য তৃণমূলের সহসভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার। তৃণমূলের অভিযোগ, এই টাকা ঝাড়খণ্ড সরকার ফেলার ষড়যন্ত্রে ব্যবহার করা হচ্ছিল। সেই প্রসঙ্গে তৃণমূল, বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলেছে। তাদের অভিযোগ, জনতার রায়ে বিজেপি যেখানে সরকার গড়তে পারছে না, সেখানে ব্যাক ডোর পলিটিক্স করে সরকার গড়ছে বিজেপি। অর্থবল, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভয় ইত্যাদিকে হাতিয়ার করে বিরোধী দলের সরকার ফেলছে বিজেপি বলেও কটাক্ষ করে তৃণমূল। সেই সঙ্গে তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি নেতারা কিছু দিন যাবৎ বলছিলেন মহারাষ্ট্রের পর এবার ঝাড়খণ্ড। এইভাবেই বিভিন্ন রাজ্যের বিরোধী দলগুলোর সরকার ফেলার হুঁশিয়ারি দিচ্ছিলেন বিজেপি নেতারা। শুভেন্দু অধিকারীও এমন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন, মহারাষ্ট্রের পর ঝাড়খণ্ডে বিজেপি সরকার তৈরি হবে। তার কয়েকদিনের মধ্যেই এমন ঘটনা ঘটায়, এই টাকা উদ্ধার বড় ষড়যন্ত্র বলছে তৃণমূল।
তৃণমূলের দাবি, যেভাবে মহারাষ্ট্রে সরকার ফেলা হয়েছে, সেইভাবেই বিজেপি ঝাড়খণ্ডেও সরকার ফেলার চক্রান্ত করছে, আর এই চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছেন এ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই টাকার উৎস তথা যাবতীয় চাক্রান্তের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ শুভেন্দু, এমনই অভিযোগ তৃণমূলের। কারণ শুভেন্দুই বারবার বলে এসেছেন মহারাষ্ট্রের পর এবার ঝাড়খণ্ড। সেই সঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতির বক্তব্যকেও হাতিয়ার করছে জোড়াফুল শিবির। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার প্রকাশ্যে বলেছিলেন, শুভেন্দু অধিকারী একটি অপারেশনে গিয়েছে। ৭২ ঘন্টা পর বুঝবেন কী হচ্ছে। সেই বক্তব্যকে নিশানা করে তৃণমূলের দাবি, এটাই কি সেই অপারেশন। তবে কি পড়শী রাজ্যের সরকার ফেলছেন শুভেন্দু? মহারাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও আসাম যোগ ছিল, কংগ্রেসের বিধায়কেরাও প্রাথমিকভাবে গোয়াহাটির কথা বলছেন। তবে কি একইভাবে হেমন্ত সোরেনের সরকার ফেলার অঙ্ক কষা হচ্ছিল? এই সব প্রশ্নই তুলছে তৃণমূল।
আরও পড়ুনঃ মহারাষ্ট্রের পর কি ঝাড়খণ্ড? সরকার ফেলতে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে বিজেপি
অন্যদিকে, মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচনের ঠিক পরের দিন ২০১৯ সালের ১৩মে আসানসোল স্টেশন থেকে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের আপ্ত সহায়কের কাছ থেকে এক কোটি টাকা উদ্ধার হওয়ার ঘটনাকেও এদিন স্মরণ করিয়েছে তৃণমূল। সেই সময় কেন্দ্রীয় সরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাহায্যে ওই ঘটনাকে ধাপাচাপা দেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, ৩০ জুলাই কংগ্রেস বিধায়কের গাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। যেহেতু বারবার সরকার ফেলার ষড়যন্ত্রের কথা সামনে আসছে এবং সুকান্ত-শুভেন্দুরা সেই ইঙ্গিত একাধিকবার দিয়েছেন, তাই শুভেন্দু অধিকারীকে হেফাজতে নিয়ে এই ঘটনার তদন্তের দাবি করছে তৃণমূল কংগ্রেস।