বিহারের রাজনৈতিক পালাবদল কতটা প্রভাব ফেলবে জাতীয় রাজনীতিতে?
মঙ্গলবার নীতীশ কুমার বিজেপি’র সঙ্গ ত্যাগ করে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। বুধবার তিনি নয়া জোটের নেতা হিসেব মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন। এর পরই সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় নীতীশ (Nitish Kumar) প্রশ্ন তোলেন, ‘‘২০১৪ সালে যাঁরা ভোটে জিতে সরকার গড়েছিলেন, তাঁরা ২০২৪-এ জিতবেন তো?’’
বুধবার দুপুর ২টোয় পাটনায় রাজভবনে শপথ নেন নীতীশ এবং তেজস্বী। মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা পরে শপথ নেবেন। সূত্রের খবর, ১৫ আগস্টের পর মন্ত্রিসভার বাকি সদস্যরা শপথ নেবেন। মন্ত্রিসভায় সবচেয়ে বেশি প্রতিনিধিত্ব থাকতে চলেছে আরজেডির। বিধানসভার স্পিকার পদটিও আরজেডির কাছে যাবে বলে সূত্রের দাবি। নীতীশ ‘চাচা’র প্রতি পুরনো অভিমান ভুলে তাঁকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়েছেন লালু-পুত্র তেজস্বী (Tejashwi Yadav)।
বিহারের রাজনৈতিক পালাবদল রাতারাতি রাজ্যসভার সমীকরণও অনেকটা বদলে দিল। জেডিইউ জোট ছাড়ার ফলে সংসদের উচ্চকক্ষে আর অপ্রতিরোধ্য রইল না বিজেপি। শুধু তাই নয়, জেডিইউ যেহেতু বিরোধী শিবিরে সরাসরি যোগ দিচ্ছে, তাই কিছুটা শক্তিশালী হল বিরোধীরাও।
এই মুহূর্তে রাজ্যসভায় জেডিইউয়ের সাংসদ সংখ্যা ৫। তাঁরা এনডিএ-তে থাকাকালীনও এনডিএ রাজ্যসভায় এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল না। তাদের সাংসদ সংখ্যা ছিল ১০৫। এবার সেটা কমে হয়ে গেল ১০০। শিব সেনার শিন্দে শিবির বিজেপির সঙ্গে থাকলেও শিব সেনার রাজ্যসভার সাংসদরা উদ্ধবপন্থী। সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন হয় ১১৯ জন সাংসদের সমর্থন। জেডিইউ শাসক শিবিরে থাকাকালীন এই সংখ্যাটা জোগাড় করতে খুব একটা অসুবিধা হত না বিজেপির। কিন্তু এবার সেই অঙ্ক অনেকটাই বদলে গেল।
আপাতত এনডিএ শিবিরের মোট আসন সংখ্যা ১০০। বিজেপি চাইলে এখনও এআইএডিএমকে, বিজেডি এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টির সমর্থন পেতেই পারে। বিজেডি এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেসের সাংসদ সংখ্যা ৯ জন করে। এআইএডিএমকে-র সাংসদ সংখ্যা ৪। সেক্ষেত্রে এই তিন দলের সমর্থনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে এনডিএ (NDA)। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা জোগাড়ের জন্য এদের সবার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হত না বিজেপিকে। এবার থেকে তিন দলের সমর্থনই প্রয়োজন হবে বিজেপি’র। যার অর্থ এই দলগুলি বিজেপির কাছে আরও দরকষাকষি করার মতো জায়গায় পৌঁছে গেল।
তাছাড়া বিজেপির (BJP) জন্য নীতীশের ছেড়ে যাওয়াটা একেবারেই ভাল বিজ্ঞাপন নয়। কারণ এই মুহূর্তে গোটা দেশে বিজেপির বড় জোটসঙ্গী বলতে তেমন কোনও দল অবশিষ্ট নেই। এই মুহূর্তে গোটা দেশে বিজেপির বৃহত্তম জোটসঙ্গী এআইএডিএমকে (AIADMK)। তাদেরও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তথৈবচ অবস্থা। বাদবাকি যারা সরকারিভাবে এনডিএতে রয়েছে, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কেউ নেই।
পাশাপাশি নীতীশ কুমারের দল বিহারে যে দুর্বল হয়েছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু তাতে জাতীয় স্তরে তাঁর রাজনৈতিক উচ্চতা কমেনি। তাৎপর্যপূর্ণ হল, বিজেপি’র সঙ্গে সরকার গড়েও তিনি গেরুয়া বা তথাকথিত সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ছোঁয়াচ এড়িয়ে চলারই চেষ্টা করেছিলেন। এনডিএ ছাড়ার পরই তিনি যে ভাবে বিজেপি বিরোধিতা শুরু করে দিলেন, তাতে বিরোধী শিবিরে নীতীশ অন্যতম চরিত্র হয়ে উঠতে পারেন বলেই অনেকে মনে করছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বিহারে জোট সরকারের পতন বিজেপির জন্য বড় ধাক্কা বইকি। মহারাষ্ট্রে মন্ত্রিসভার যে সম্প্রসারণ হয়েছে তা জাতীয় স্তরে কোনও আলোচনাতেও আসেনি। তা ছাড়া এর ফলে ঝাড়খণ্ডে বিজেপি’র স্বপ্নভঙ্গের আশঙ্কা রয়েছে বলেও অনেকে মনে করছেন।
অন্যদিকে বিহারে এখন ‘চাচা-ভাতিজা’র সরকার। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে অষ্টমবারের জন্য শপথগ্রহণের পর নীতীশও রাগ ভুলে আলিঙ্গনবদ্ধ হয়েছেন ডেপুটি ‘ভাতিজা’র সঙ্গে। লালু-পুত্র তেজস্বী আগামী এক মাসের মধ্যে রাজ্যে বিপুল কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিলেন। প্রত্যয়ের সঙ্গে দাবি করলেন, দেশের বাকি রাজ্যগুলি বিহারকে অনুসরণ করবে।