বিনামূল্যের পরিষেবাই করোনা বিধ্বস্ত বাংলার অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়েছে, মত অমিতের
বিনামূল্যের পরিষেবা নিয়ে বাংলার সরকারকে প্রায়ই কাঠগড়ায় তোলেন মোদী। এ রাজ্যের বিরোধীরাও সেই পথ অনুসরণ করে। কিন্তু মোদী নিজেও তো বিনামূল্যের পরিষেবা দেন। চোখে আঙুল দিয়ে তা দেখিয়ে দিলেন বাংলার প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা ডাঃ অমিত মিত্র। এক বেসরকারি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে, অমিত মিত্র বিনামূল্যের পরিষেবার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি বিনামূল্যের পরিষেবার বিষয়ে মোদী সরকারের দ্বিচারিতা তথা মিথ্যাচার নিয়েও সরব হয়েছেন।
দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্যে বিনামূল্যের পরিষেবার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। মোদী সরকার ৮টি কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকা প্রদান করে যা বিনামূল্যের পরিষেবার অধীনে ধরা যেতে পারে। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হঠাৎই প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি কর্মসূচির অধীনে নতুন করে ১০কোটি কৃষকদের ৬,০০০ টাকা করে দেওয়া কথা ঘোষণা করেছিলেন। এটি তো আদপে বিনামূল্যের পরিষেবারই সামিল।
একইভাবে, ন্যাশনাল অ্যাসিস্টেন্স প্রোগ্রামের অধীনে মোদী সরকার ৯,৬৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। মনে হচ্ছে বিনামূল্যের পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং তার সরকার নিজেদের যেন নিজেদেরই দেখছেন।
পশ্চিমবঙ্গের মানুষেরা কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পগুলি থেকে উপকৃত হয়েছেন। বাংলা ৭৫ লক্ষ মেয়ে প্রত্যেকে ২৫,০০০ টাকা করে পেয়েছে, যার ফলে স্কুলছুটের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। একইভাবে, কৃষকবন্ধু প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকেরা উপকৃত হয়েছেন। অত্যন্ত সংকটময় সময়ে কৃষকবন্ধু প্রকল্প কৃষকদের সাহায্য করেছে। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প প্রতিদিন ১০,০০০ মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান দিয়ে চলেছে। লক্ষ্মী ভান্ডার প্রকল্পের আওতায় অভাবী পরিবারের মহিলারা প্রতি মাসে ৫০০ টাকা পর্যন্ত পান।
এই সমস্ত অর্থ প্রদান অবিলম্বে চাহিদা তৈরি করে, বিশেষত করোনার সময় তা অর্থনীতিতে সাহায্য করেছে। পশ্চিমবঙ্গ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্যে সর্বোচ্চ পুরস্কার দিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। এই পুরস্কারপ্রাপ্তিকে বিনামূল্যের পরিষেবার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বলা যেতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ইকোনমিক সিকিউরিটি অ্যাক্টের অধীনে ২.২ ট্রিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে। এর ফলে মার্কিন মুলুকে চারজন সদস্যর এক একটি পরিবার মাসে ৩,৪০০ ডলার করে অর্থ সাহায্য পায়। এটিও তো বিনামূল্যের পরিষেবারই মতো, এই অর্থ সাহায্য চাহিদা তৈরি করে, অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যুক্তরাজ্যে, ৮০ শতাংশ কর্মরত নাগরিকদের বেতন সে দেশের সরকার দেয়। জার্মানিতে অর্থনৈতিক সহায়তা প্রকল্পের অধীনে অর্থ সাহায্য করা হয়, এমনকি অস্ট্রেলিয়াতেও মানুষকে অর্থ সাহায্য করে সরকার; এই সবগুলি দেশই পুঁজিবাদী, সেখানে বাজার অর্থনীতি বিনামূল্যের পরিষেবার মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিকভাবে দরিদ্রদের জন্যে চাহিদা বাড়তে কীভাবে উদ্দীপনা প্রদান করা হয়, যাতে তারা বাজারমুখী হয়ে এবং একটি কীনসিয়ান গুণাঙ্ক তৈরি করতে পারে, ভারতের ক্ষেত্রে, মোদী সরকার কি সেই বিষয় সম্পর্কে সচেতন?
এটি কেমনভাবে করা যেতে পারে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল বাংলা। বাংলার রাজস্ব ঘাটতি আনুপাতিকভাবে অনেক কম, কেন্দ্রের অর্ধেকেরও কম। বাংলা ঋণ-জিডিপির অনুপাত মাত্র ৩৪ শতাংশ, যা অন্য যেকোনো ঋণের তুলনায় অনেক কম। বেসরকারি ক্ষেত্রেগুলি ব্যাপকভাবে জনমানসে সাধারণ বুনিয়াদি শিক্ষা প্রদান করে না। একইভাবে, সরকারের তরফে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী মোদী ভিত্তিহীনভাবে বলে যাচ্ছেন, রাজ্যগুলি জনগণকে বিনামূল্যের পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, কেন্দ্র নিজেই তা করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশও তাই করছে। কিন্তু অনুসরণ করার মতো বিষয় হল ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ডিজিটাল ট্রান্সফার। যা বাংলা সরকার করে চলেছে এবং এই কাজের জন্যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতও হয়েছে।