২৪-এ মোদীকে রুখতে প্রয়োজন নয় দেশব্যাপী প্রাকনির্বাচনী মহাজোট: তৃণমূল
২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে মোদীকে ঠেকাতে গোটা দেশজুড়ে প্রাকনির্বাচনী মহাজোটের দরকার নেই, এমনটাই মত তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বর। তৃণমূলের বক্তব্য, নীতীশ কুমার বিজেপির সঙ্গ ছাড়ার পরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে বিহারে মহাজোট গুরুত্বপূর্ণ হবে। ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র এবং অসমে মহাজোট মোদী বিরোধী লড়াইয়ে দাগ কাটতে পারে। জোড়াফুল শিবিরের বক্তব্য, দেশের অন্যান্য রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে নির্বাচনী লড়াইয়ে কোন মহাজোটের প্রয়োজন নেই।
তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বাংলায় ৪২টি আসনেই লড়বে তৃণমূল। বেশিরভাগ রাজ্যে, সে রাজ্যের প্রধান শক্তিশালী রাজনৈতিক দলই যাতে সরাসরি বিজেপির মুখোমুখি হয়, তা নিয়ে বিরোধী দলগুলির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলছে তৃণমূল।
রাজ্যসভায় তৃণমূলের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের কথায়, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং মহারাষ্ট্র বাদে অন্য কোন রাজ্যে মহাজোটের কোন প্রয়োজন হচ্ছে না। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে যেখানে পারবে বিজেপিকে হারাতে লড়াই করবে, পরে সকলে একসঙ্গে চলে আসবে। বলা হচ্ছে, পাঞ্জাবে ও দিল্লিতে আপ, তামিলনাড়ুতে ডিএমকে, তেলঙ্গানায় টিআরএস, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল, উত্তরপ্রদেশে এসপির মতো দলগুলি নিজ নিজ রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
মোদী বনাম রাহুল মডেল ইতিমধ্যেই ব্যর্থ। তাই আগামী নির্বাচনে ওই মডেলে যেতে রাজি নয় জোড়াফুল শিবির। কোন ব্যর্থ নেতা নয়, মোদীকে দেশের নানান রাজ্যের বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের শক্তিশালী নেতার বিরুদ্ধে লড়তে হবে। একই সঙ্গে ঘাসফুল শিবিরের মত, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাতের ইত্যাদির মতো রাজ্যে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের লড়াইয়ে কোন বিরোধী ভোট কাটা তৃতীয় শক্তি যাতে না থাকে, তাও নিশ্চিত করা জরুরি।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল তৃণমূলের তত্ত্বের মধ্যে দিশা দেখছেন। দেশব্যাপী মহাজোট হলে, জোটের নেতৃত্ব নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হন। মমতা আঞ্চলিক দলগুলোকে নিজ নিজ রাজ্যে লড়াই করতে বলছেন, তিনি নিজে সেতুবন্ধনের কাজ করবেন। যদিও কংগ্রেসের দাবি, নিজ নিজ রাজ্যে লড়াই করার নীতি গ্রহণ করা আঞ্চলিক দলগুলির পক্ষে স্বাভবিক ও সহজ। হাত শিবিরের বক্তব্য, কংগ্রেসের মতো জাতীয় দল, যাদের দেশের সব জায়গাতেই সংগঠন, কর্মী ও প্রার্থী রয়েছে, সেক্ষেত্রে কেন তারা লড়াই থেকে সরে আসবে? কংগ্রেসের দাবি, যে যে রাজ্যে কংগ্রেস শক্তিশালী, সেই সেই রাজ্যের আঞ্চলিক দলগুলি বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইতে কংগ্রেসকেও সামিল করুক। কংগ্রেস নেতৃত্বের মত, এতে ফল আরও ভাল হবে।
তৃণমূল নেতৃত্ব বলছে, ২০২৪-এর ভোটে বিজেপি যদি আড়াইশো আসনে আটকে যায়, তবে বিজেডি এবং জগন রেড্ডির ওয়াই এস আর কংগ্রেস কী ভূমিকা নেয়, তা দেখবে হবে। দুই শিবিরের কাছেই দুটি দলের নির্ণায়ক হয়ে যেতে পারে। দল দুটি এতদিন বিজেপির সঙ্গেই আঁতাত রেখে গিয়েছে, কিন্তু বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেই এই দুই দল বিরোধী শিবিরে যোগ দিতে পারে। বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, কর্নাটকের মতো রাজ্যে ২০১৯-এর তুলনায় এনডিএর আসন কমবে বলেই মনে করছে বিরোধীরা। বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব নীতীশ কুমারকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার দাবিতে সওয়াল করছেন। যা এই পরিস্থিতিতে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী তথা টিআরএস প্রধান কে চন্দ্রশেখর রাও মোদী আমলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন। মোদী-শাহেরা পশ্চিমবঙ্গ এবং তামিলনাড়ু সরকারকে ভাঙার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ করছেন তিনি। স্বভাবতই ২৪-এর মোদী বিরোধী লড়াই কোন পথে হবে, কীভাবে হবে, সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।