ইডি-সিবিআই দিয়ে দেশ জুড়ে চলছে ‘অপারেশন লোটাস’!
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশের নানা প্রান্তে ইডি, সিবিআই’র অতিসক্রিয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিজেপি বিরোধীরা যেখানে যেখানে শক্তিশালী সেখানেই ইডি বা সিবিআইয়ের বিশেষ তৎপরতা নজরে আসছে।
ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের (Hemant Soren) ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত প্রেম প্রকাশের বাড়িতে অভিযান চালায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা। এদিন প্রেমের বাড়ি ছাড়াও অবৈধ খনির মামলায় ঝাড়খণ্ড, বিহার, তামিলনাড়ু ও দিল্লির একাধিক ঠিকানায় অভিযান চালায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। এই অভিযানে অবৈধ খনি মামলার প্রচুর নথি পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি ইডির। এছাড়াও একাধিক ব্যক্তি মুখ খুলেছেন গোয়েন্দাদের কাছে, বলে জনা যাচ্ছে ইডি (ED) সূত্রে।
প্রেম প্রকাশের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আলমারি থেকে দু’টি একে ৪৭ বন্দুক উদ্ধার করেছে বলে জানা গিয়েছে। আলাদা করে অস্ত্র আইন মামলা করা হয়েছে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। অবৈধ খনির মামলায় ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনও নজরে রয়েছে ইডির। এরমধ্যেই আজ হেমন্ত ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে একে ৪৭-এর মতো অস্ত্র উদ্ধার নতুন বিতর্ক তৈরি করল বলা বাহুল্য। সাম্প্রতিককালে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের থেকে মোট ১১.৮৮ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। দেশের মোট ৩৭টি ব্যাঙ্কে ওই টাকা রাখা ছিল বলেও দাবি করেছেন তদন্তকারীরা। অবৈধ খনির মামলায় সব মিলিয়ে এখনও অবধি ৩৬ কোটি ৫৮ লক্ষ বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি।
অন্যদিকে বিহার বিধানসভায় (Bihar Assembly) বুধবার ছিল শক্তিপরীক্ষা, ঠিক সেদিনই একপ্রকার হঠাৎ পুরনো মামলায় সক্রিয় হয়ে উঠল সিবিআই (CBI)। ইউপিএ জমানায় জমির বদলে চাকরি দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছিল সেই মামলায় এদিন সকাল থেকে আরজেডির (RJD) একাধিক নেতার বাড়িতে তল্লাশি চালাল সিবিআই। এদিন সকাল থেকে বিহার, দিল্লি, এবং হরিয়ানার বিভিন্ন প্রান্তের ২৫টি জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছেন সিবিআই আধিকারিকরা। বিহারের পাটনা, কাটিহার এবং মধুবনীতে একাধিক হাই প্রোফাইল আরজেডি নেতার বাড়িতে এদিন তল্লাশি চালানো হয়েছে। এই নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুনীল সিং, সুবোধ রাই, ডঃ ফৈয়াজ আহমেদ এবং আশফাক করিম। এদিন সকাল থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করা না হলেও আস্থা ভোটের আগে এই তল্লাশি অভিযান বিহারের নবগঠিত মহাজোট সরকারের মনোবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা হিসাবেই দেখছে রাজনৈতিক মহল।
দিল্লির আবগারি নীতি নিয়ে সিবিআই তদন্তের মুখে সেখানকার উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া (Manish Sisodia)। সূত্রের খবর অনুযায়ী, তাঁর গ্রেপ্তারির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আবগারি দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে মণীশ সিসোদিয়া আগেই দাবি করেছেন, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ বার দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী দাবি করলেন, শুধু তিনিই নয়, বেশ কয়েক জন আপ বিধায়ককে নিশানা করেছে বিজেপি। তাঁদের ক্রমাগত ইডি-সিবিআইয়ের ভয় দেখানো হচ্ছে। দল ছেড়ে বেরিয়ে এলে তাঁদের ২০ কোটি টাকা ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করলেন মণীশ। যদিও তাঁর বিশ্বাস, বিজেপির এই দল ভাঙানোর প্রচেষ্টা বৃথা। আপ নেতারা কোনও দিনই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। দলের নেতাদের হুমকি এবং ঘুষ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কেজরীবাল (Arvind Kejriwal) ও আপ সাংসদ সঞ্জয় সিংহ।
আপ (AAP) নেতৃত্ব আগেই দাবি করেছেন, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ ও কর্নাটকের মতো দিল্লিতেও ‘অপারেশন লোটাস’ চালিয়ে বিজেপি (BJP) সরকার ফেলার চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে সিবিআই, ইডি বিশেষ দপ্তর খুলেছে বলে কটাক্ষ করতে শোনা যাচ্ছে তৃণমূল (TMC) নেতাদের মুখে। তাঁদের মতে বিজেপি যেন ‘ওয়াসিং মেসিন’। শুভেন্দু অধিকারীরা (Suvendu Adhikari) বিজেপিতে যোগ দিয়েছে বলে তাঁর সাতখুন মাফ! আর বাংলায় এখনও নিজেদেরে সংগঠন গুছিয়ে উঠতে না পারায় বিজেপি ইডি, সিবিআই-কে এখন কাজে লাগাচ্ছে। যাতে লোকসভা নির্বাচনের আগে এই বার্তা দেওয়া যায়- হয় বিজেপিতে এসো, না হয় তোমার বাড়িতে ইডি-সিবিআই হাজির হবে!
পাশাপাশি বিরোধীদের মনোবল লোকসভা নির্বাচনের আগে ভেঙে দেওয়ার কৌশল নিয়েছেন মোদী-শাহরা। যাতে তাঁদের সরকারের জনবিরোধী নীতিগুলো নিয়ে বিরোধীরা বেশি সরব হতে না পারে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বিজেপি শাসিত কোনও রাজ্যে কিন্তু ইডি, সিবিআই-এর তৎপরতা নজরে আসে না। মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটক, গুজরাটে কি কোনও দুর্নীতি হয়নি বা হচ্ছে না? সব দুর্নীতি বা আর্থিক অনিয়ম বিজেপি বিরোধী রাজ্যগুলিতে? তাদের মতে আসলে এখন মোদী-শাহরা ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে জয়ের রাস্তা কন্টকহীন করতে ‘অপারেশন লোটাস’ চালাচ্ছে।