দুর্গা পুজোতেও আর আস্থা নেই বঙ্গ বিজেপির!
বাংলায় পদ্মের ভরাডুবি অব্যাহত। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই বাংলার মাটিতে প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে বিজেপি। শোনা যাচ্ছে, ভাটার টান পড়েছে বিজেপির দুর্গাপুজোতেও। অনিশ্চয়তার মেঘ ঘনিয়েছে বিজেপির দুর্গাপুজোর (Durga Pujo) ভবিষ্যৎ নিয়ে। প্রশ্ন উঠছে, ২০২২-এই কি শেষবারের মতো দুর্গা আরাধনায় ব্রতী হবে বঙ্গ বিজেপি?
গেরুয়া শিবিরের অন্দরে খবর, এবারের পুজো শুধুই নিয়ম রক্ষার। শোনা যাচ্ছে, উৎসব হিসেবে নয়, প্রচলিত ধর্মীয় রীতি মেনেই তৃতীয়বারের জন্যে পুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজেপি (BJP) নেতৃত্ব। প্রসঙ্গত, প্রচলিত হিন্দু লোকাচারে অনুযায়ী, কোন ব্রত বা পুজো একবার পালন করলে তা এক নাগাড়ে তিন বার করতে হয়। সেই বাধ্যবাধকতা থেকেই বিজেপি কতকটা বাধ্য হয়ে দুর্গাপুজোয় রাজি হয়েছে। নয়ত বিজেপির হিন্দুত্বের রাজনীতির ইমেজ ভেঙে টুকরো হয়ে যাবে।
২০২০ সালে বিজেপি দুর্গাপুজোর শুরু করেছিল। তখন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কাল, উত্তেজনায় ফুটছে বিজেপি। ক্ষমতায় আসার নেশায় মত্ত বিজেপির উৎসাহের অভাব ছিল না। ভার্চুয়াল মাধ্যমে পুজোর উদ্বোধন করেছিলেন মোদী (Narendra Modi)। ভোটের আগে বাঙালির মন জয় করতে বিধাননগরের পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রে পুজোয় মেতে ছিল বিজেপি। পুষ্পাঞ্জলির ধুম পড়েছিল। ঢাক বাজানো থেকে আরতিতে কিছু ত্রুটি রাখেনি বিজেপি। কিন্তু একুশের বিধানসভা নির্বাচনে স্বপ্নভঙ্গ হয় বিজেপির। তারপর থেকে লাগাতার একের পর এক নির্বাচন, উপনির্বাচনে পরাজায়, নেতাদের দলত্যাগ, গোষ্ঠী কোন্দল, সংগঠনের বেহাল দশায় বেসামাল বিজেপি। এতেই ঘনিয়েছে অনিশ্চয়তা।
জানা যায়, পুজোর উদ্যোগী ছিলেন মূলত মুকুল রায়, সব্যসাচী দত্ত (Sabyasachi Dutta)। দিল্লির সবুজ সংকেত আদায় করে দিয়েছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। যদিও পুজোর বিপক্ষে ছিলেন তদানীন্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। পুজোর দুই উদ্যোক্তা সব্যসাচী দত্ত এবং মুকুল রায়, দু-জনেই বিধানসভা ভোটের পর তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন। বঙ্গ বিজেপির তৎকালীন পর্যবেক্ষক কৈলাসের জায়গায় আসছেন সুনীল বনসল। বিগত বছর পুজোর সময়েও অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। কোনরকমে নমো নমো করে পুজো করা হয়েছিল। খাতায় কলমে কৈলাস (Kailash Vijayvargiya) দায়িত্বে থাকলেও তার টিকি পাওয়া যায়নি।
ভবানীপুরসহ বিভিন্ন উপনির্বাচনে হারের পর গত বার পুজোর আগে মুষড়ে পড়েছিল বিজেপি শিবির। তৎকালীন রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে ২০২০ ও ২০২১ সালে পুজোর সংকল্প করা হয়েছিল। অধুনা সেই প্রতাপবাবুও রাজ্য কমিটিতে নেই। তাই ক্রমেই বাড়ছে অনিশ্চয়তা। তবে পুজো হবে এইটুকুই আপাতত ঠিক হয়েছে। পুজোর কোন প্রস্তুতিই নেওয়া হয়নি। পুজোর আগে হাতে মোটে একমাস সময় কিন্তু পুজোয় কেমন, কী হবে তা নিয়ে কোন আলোচনাই হয়নি। তবে কি এবারেই শেষ হবে বিজেপির উমা আরাধনার পর্ব? বিজেপির অন্দরে খবর, পরিস্থিতি সেদিকেই এগোচ্ছে।