পঞ্চায়েত স্তরে দুর্নীতি রুখতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ রাজ্যের
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যের পঞ্চায়েতগুলিতে স্বচ্ছতা আনতে তৎপর হল নবান্ন। দুর্নীতি নির্মূল করার প্রশ্নে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের জন্য একাধিক সুপারিশ করেছিল গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বহু বছর শূন্য পড়ে থাকা স্বাধীন অডিটর (ইন্ডিপেন্ডেন্ট অডিটর) পদে নিয়োগ। এই অডিটর প্রকল্পগুলির বরাদ্দ অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নজরদারি চালাবেন। কেন্দ্রের পরামর্শ মেনে এই শূন্যপদ পূরণ করল রাজ্য। এর ফলে গ্রামোন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা আটকে রাখার আর কোনও নির্দিষ্ট কারণ মোদী সরকারের হাতে রইল না বলে মনে করা হচ্ছে। ‘১০০ দিনের কাজ’ প্রকল্পে আগের কিছু বকেয়া যেমন রাজ্যের পাওনা, তেমনি চলতি আর্থিক বছরেও বাংলার জন্য এই খাতে কোনও বরাদ্দ করা হয়নি। দীর্ঘদিন ফাঁকা পড়ে থাকা এই গুরুত্বপূর্ণ পদে কেন্দ্রের পরামর্শ মেনে আধিকারিক নিয়োগের পর সেই বরাদ্দ আর আটকে থাকবে না বলে আশাবাদী রাজ্য প্রশাসন।
পাশপাশি, গত ১৮ অগস্ট রিভিউ মিটিং করে নবান্ন (Nabanna) থেকে জেলা প্রশাসনকে পষ্টাপষ্টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, পঞ্চায়েতে সমস্ত ভুয়ো খরচের হিসাব বের করতে হবে। তার এফআইআর দায়ের করে সেই টাকা উদ্ধার করতে হবে। অর্থাৎ নবান্ন এক প্রকার জানিয়ে দিয়েছিল যে, পঞ্চায়েতে চোর ধরো এফআইআর করো।
শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মতিতে ফের কড়া নির্দেশ গেল জেলাগুলিতে। তাতে বলা হয়েছে, গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে যে সব কর্মী একই অফিসে তিন বছরের বেশি সময় ধরে রয়েছেন, তাঁদের অবিলম্বে বদলি করতে হবে। এই নিয়ম কঠোরভাবে পালন করতে হবে। শুধু তা নয়, দ্রুত বদলি করে সেই রিপোর্ট পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কাছে পেশ করতে হবে।
নবান্নের এক আমলা এ ব্যাপারে বলেন, আসলে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির অফিসগুলো হচ্ছে ঘুঘুর বাসা। এক শ্রেণি অসাধু কর্মচারী টাকা নিয়ে নানান অনিয়ম করে বেড়াচ্ছে। ওই আমলার কথায়, পঞ্চায়েতে নির্বাচিত সদস্যরা সবাই যে অসাধু তা নয়। আসলে কর্মচারীদের মধ্যেই অসাধু রয়েছে। তাঁরাই নবনির্বাচিত সদস্যদের যত ঘাতঘোঁত শেখানোর চেষ্টা করে। যাতে তাঁদের পকেট ভারী হয়। এবং তাঁদের কারণে আসলে বদনাম হচ্ছে সরকার।
কয়েকদিন আগে পঞ্চায়েতের কাজে স্বচ্ছতা আনতে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানদের স্মার্ট ফোন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ওই স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে উন্নয়ন বিষয়ক সর্বশেষ তথ্য ও ছবি ‘আপলোড’ করা যাবে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের ওয়েবসাইটে। সেখান থেকে তা দেখে নিতে পারবেন যে কেউ।
এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থ সহায়তায়। রাজ্যের ৯টি জেলার যে এক হাজার গ্রাম পঞ্চায়েতে বিশ্বব্যাঙ্কের ‘গ্রাম পঞ্চায়েত সশক্তিকরণ প্রকল্প’ (আইএসজিপি) চলছে, সেগুলিতে ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েত প্রধানদের হাতে ওই ফোন তুলে দেওয়া হয়েছে। আইএসজিপি প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যে, গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে উন্নয়নের টাকার হিসেব রাখতে প্রশিক্ষণ দেওয়া, এবং স্বচ্ছতা আনতে নানা ব্যবস্থা নেওয়া। পঞ্চায়েতগুলির সাফল্যের অনুপাতে বাড়তি অনুদান দেয় ব্যাঙ্ক।