NCRB রিপোর্টে পরপর ২ বছর দেশের নিরাপদতম শহরের শিরোপা জয় কলকাতার
দেশের সবচেয়ে নিরাপদ শহর কলকাতা। ২০২০-এর, ২০২১-এও লাগাতার পর পর দু-বছর এই তকমা ছিনিয়ে নিল মহানগরী। সদ্য প্রকাশিত ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর রিপোর্টে এই তথ্যই সামনে এসেছে। প্রতি লক্ষ জনসংখ্যার নিরিখে গোটা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন অপরাধ নথিভুক্ত হয়েছে কলকাতায়। সেই কারণেই দেশের নিরাপদতম শহরের (Safest Cities) তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলার রাজধানী।
বিগত চার বছরে এনসিআরবি রিপোর্টে (NCRB Report) কলকাতা ২০১৮, ২০২০ ও ২০২১ সালে তিনবার শীর্ষে উঠে এসেছে। কেবল ব্যতিক্রম ছিল ২০১৯ সাল, কারণ সে বছর এনসিআরবি তরফে দাবি করা হয়েছিল, তারা রাজ্যের তথ্য পায়নি। এবারের রিপোর্টে কলকাতার স্কোর ১০৩.৪ অর্থাৎ প্রতি ১ লক্ষ লোকে নথিভুক্ত অপরাধের সংখ্যা ১০৩-এর মতো। এই সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান কলকাতার বিগত বছরের পরিসংখ্যান তুলনায় আরও ভাল, ২০২০ সালে কলকাতায় স্কোর ছিল ১২৯.৫। এবারের তালিকায় ২৫৬.৮ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পুনে। তারপরেই রয়েছে হায়দ্রাবাদ (২৫৯.৯), কানপুর (৩৩৬.৫), বেঙ্গালুরু (৪২৭.২) এবং মুম্বাই (৪২৮.৪)। প্রসঙ্গত, যে সমস্ত বড় শহরগুলির জনসংখ্যা ২ কোটির বেশি, তাদের নিয়েই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে এনসিআরবি।
কলকাতা (Kolkata) অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে। অন্যান্য শহরগুলি পরিসংখ্যানের নিরিখে কলকাতার ধারেকাছেও নেই। আইপিসি অনুযায়ী কলকাতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধের হার ২০২১ সালে ১০৯.৯ থেকে কমে ৯২.৬ নেমে এসেছে। ২০১৮ সালে শাস্তিযোগ্য অপরাধের হার ছিল ১৩৯.৫, ২০১৭ সালে ১৪১.২ এবং ২০১৬ সালে ১৫৯.৬। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, গত সাত বছর ধরে কলকাতার শাস্তিযোগ্য অপরাধের হার কমছে। শাস্তিযোগ্য অপরাধের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার পরিমাণও কমছে। ২০১৪ সালে শাস্তিযোগ্য অপরাধের সংখ্যা সংখ্যা ছিল ২৬,১৬১, ২০২০ সালে তা কমে ১৮,২৭৭ নেমে আসে এবং ২০২১ সালে আরও হ্রাস পেয়ে মামলার সংখ্যা ১৪,৫৯১-এ নেমে এসেছে। পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে কলকাতা কতটা নিরাপদ। ২০২১ সালে বাংলায় ৪৫ টি খুনের মামলা এবং ১৩৫ টি মামলা চেষ্টার মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। ২০১৮ সালে এই সংখ্যাটা ছিল যথাক্রমে ৫৩ ও ১২১, ফলে সংখ্যাতত্ত্বই বলে দিচ্ছে অপরাধ হ্রাসের পরিমাণ।
মহানগরীতে ধর্ষণের সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। ২০২০ ও ২০২১ সালে ১১টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কলকাতায়, ২০১৭ ও ২০১৮ সালের যথাক্রমে ১৫ ও ১৪ টি ধর্ষণ হয়েছিল কলকাতায়৷ কলকাতায় মুক্তিপণের জন্যে ১০টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। দিল্লি (Delhi) এবং চেন্নাইয়ে (Chennai) সেই সংখ্যাটা 17।
কলকাতার এই লাগাতার সাফল্যের প্রসঙ্গে নগরপাল বিনীত গোয়েল জানিয়েছেন, কলকাতা পুলিশের কর্মীদের কঠোর পরিশ্রম এবং কলকাতারবাসী সক্রিয় সহযোগীতায় এই নজির গড়েছে কলকাতা। গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্তা রাজ্য সরকারের সদর্থক ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। পরিকাঠামোর উন্নয়ন, জনবল বাড়ানো এবং এর পাশাপাশি লাগাতার নাকা চেকিং, নাইট পুলিশিং ইত্যাদি ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার যেভাবে কাজ করে গিয়েছে তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ গোয়েন্দা বিভাগ।